শিরোনাম
বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রভাব মোকাবিলায় নেওয়া হচ্ছে তিন মেয়াদি পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রভাব মোকাবিলায় নেওয়া হচ্ছে তিন মেয়াদি পরিকল্পনা

আ হ ম মুস্তফা কামাল

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার তিন ধরনের মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এগুলো হচ্ছে, অবিলম্বে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এবং স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে রপ্তানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রী গতকাল তার বাসভবনে করোনার প্রভাব এবং উত্তরণ সম্পর্কে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব কথা বলেন। বৈঠকে এই প্রথম অর্থমন্ত্রী করোনার প্রভাবে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে স্বীকার করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আইআরডি সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের মতো নানামুখী অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবিলা করতে হতে পারে। আমরা এখনো জানি না করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কতদিন থাকবে। আমাদের আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ আরও কম হতে পারে। চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বিলম্বের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হোটেল- রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং এভিয়েশন সেক্টরের মতো সার্ভিস সেক্টরগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এর মূল্য ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রবাস আয়ের ওপর। তবে যেহেতু বিগত ৮ মাসে প্রবাস আয়ে ২১ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি ছিল সেহেতু আগামী চার মাসে প্রবাস আয় কিছুটা কম হলেও বছর শেষে গত অর্থবছরের তুলনায় কম হবে না বলে আশা করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বের অর্থনীতি করোনার প্রভাবে কেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে প্রাক্কলন প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। কেননা এখনই সামগ্রিক প্রাক্কলন সম্ভব নয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রাক্কলনে করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে, যদি করোনার প্রভাব বাংলাদেশে খুব খারাপভাবে পরিলক্ষিত হয়। অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে রপ্তানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পসহ উৎপাদনমুখী সব প্রতিষ্ঠানে বিরূপ প্রভাব এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে। রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা শঙ্কিত। করোনা মোকাবিলা ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি ও মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধিকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক এ বিরূপ প্রভাব উত্তরণে বেশ কিছু অবিলম্বে, স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। তিনি বলেন, অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূল ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নিম্নআয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে- ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা দেওয়া হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেওয়া হবে। বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। রপ্তানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর