রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ইফতারের আনন্দ আল্লাহর দিদার লাভ করা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইফতারের আনন্দ আল্লাহর দিদার লাভ করা

হে সায়েম আপনি জানেন কি হাদিস শরিফে রসুল (সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। দুনিয়ায় একটি, আখেরাতে অন্যটি। দুনিয়ার আনন্দ হলো ইফতারের আনন্দ। আখেরাতের আনন্দ হলো দিদারে ইলাহি তথা প্রেমময় প্রভুর প্রেমদর্শনের আনন্দ (বোখারি শরিফ)। সত্যি! ইফতারের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। রসুল (সা.) ইফতারের মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ইফতার যেমন রোজাদারের জন্য আনন্দময় ও সওয়াবে ভরপুর নেয়ামত। একইভাবে ইফতারের জন্য অপেক্ষার সময়টুকুও রোজাদারের আমলনামায় অফুরন্ত সওয়াব লিখেন ফেরেশতারা। শুধু তাই নয়, নবীজি (সা.) বলেছেন, ইফতারের সময় এতই মূল্যবান, এ সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবেন, তাই কবুল করবেন।

ইফতার যথাসম্ভব দ্রুত করা উচিত। হাদিসে বড় কল্যাণের কারণ বলা হয়েছে এ কাজকে। তিরিমিজি ও আবু দাউদ শরিফের হাদিসে এসেছে, নবীজি বলেছেন, তোমরা ততদিন পর্যন্ত কল্যাণের সঙ্গে থাকবে যতদিন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে। আরেকটি হাদিসে নবীজি বলেছেন, আমি ওই উম্মতকে ভালোবাসি, যে দ্রুত ইফতার করে। তারপর নবীজি বলেন, পূর্ববর্তী সব নবীজির সুন্নাত ছিল, দ্রুত ইফতার করা (আবু দাউদ)। সারা দিন ক্ষুধার্ত থেকে ইফতারের সময় খাবারের ওপর হামলে পড়তে দেখা যায় অনেককে। এটিও সুন্নাতবিরোধী কাজ। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও ইফতারে অতিভোজন স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। নবীজির ইফতার ছিল খুবই সাদামাটা। আসলে নবীজি বিজ্ঞানময় জীবনযাপন করতেন। তিনি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন, দীর্ঘ সময় পাকস্থলী খালি থাকার পরপরই খুব বেশি খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। তা ছাড়া রুহকে তাজা করার এই মাসে দেহকে বেশি খাবার দেওয়াও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে বড় বাধা। তাই নবীজি পুরো রমজানজুড়েই বেশি বেশি ইবাদত করতেন কিন্তু খুব কম খাবার খেতেন।

হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, নবীজি ইফতার করতেন তাজা খেজুর দিয়ে। তাজা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে। তাও না পেলে কয়েক ঢোক দুধ পান করতেন। তারপরই মাগরিবের নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আমরা যারা রমজানকে আত্মার পরিশুদ্ধির মাস হিসেবে নিয়েছি, আমাদেরও নবীজির মতো পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

অন্যকে ইফতার করানোর সওয়াব সম্পর্কে নবীজি বলেন, কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের সমান সওয়াবও তাকে দেওয়া হবে। এ জন্য কারও সওয়াব থেকে কমানো হবে না। এমন লোভনীয় সওয়াবের কথা শুনে সাহাবিরা খুবই খুশি হলো। একজন জিজ্ঞেস করল, হে নবীজি (সা.) আমাদের মধ্যে এমন অনেক দরিদ্র সাহাবি আছেন, যারা অন্যকে ইফতার করানোর সামর্থ্য রাখে না। নবীজি বললেন, তুমি চাইলে তোমার ভাইকে এক ঢোক পানি কিংবা একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করিয়েও সওয়াব অর্জন করতে পার।

এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে আমরা ঘরবন্দী জীবনযাপন করছি। বহু মানুষের ঘরে এখন ইফতার করার মতো ন্যূনতম খাবারটুকুও নেই। এ অবস্থায় আমাদের সাধ্যমতো পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়দের খোঁজখবর নিতে হবে। যারা কাছাকাছি থাকে যেমন পাশের বাসায় বা পাশের বাড়ির প্রতিবেশী তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। আর যারা একটু দূরে আছে, তাদের কাছে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। ইফতারের আনন্দে সবাই যেন শরিক হতে পারে সে চেষ্টা করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর