বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

কামাল বেঁচে থাকলে সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারত : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কামাল বেঁচে থাকলে সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারত : প্রধানমন্ত্রী

ছোট ভাই শেখ কামালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেদনার্থ কণ্ঠে বলেন, আজকে কামাল যদি বেঁচে থাকত এই সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারত। কারণ তার বহুমুখী প্রতিভা বিকশিত হয়ে দেশের সব অঙ্গনে অবদান রাখতে পারত এবং সে রেখেও গেছে সেই চিহ্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা এ কথা বলেন। গতকাল দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অডিটরিয়ামে শহীদ কামালের বর্ণাঢ্য কর্মবহুল জীবনের ওপর ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কী নির্মমভাবে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড ঘটেছে। সবাইকে এক দিনে হারাব এটা কখনই কল্পনা করতে পারিনি। আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন! আমার বাবা দেশ শুধু স্বাধীনই করেননি, তিনি এই সেনাবাহিনী গড়েও তুলেছিলেন। যারা আমাদের বাড়িতে রীতিমতো আসা-যাওয়া করত, আমাদের বাড়িতে নাস্তা-ভাত খায়নি এরকম কেউ নেই। আর তারাই সরাসরি কামালের সামনে এসে কামালকে গুলি করে, জামালকে গুলি করে বা বাড়িতে এভাবে গুলি করল। আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। একটা মৃত্যু হলেই তার বিচার দাবি করেন আমার কাছে, আর আমি কিন্তু বিচার পাইনি। 

আপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, কামাল যাদের সঙ্গে কাজ করেছে, যাদের সঙ্গে একসঙ্গে ছিল... এমনকি ওসমানী সাহেবের এডিসি আরেকজন আর্মি অফিসার সেও একসঙ্গে কাজ করেছে আর তাদের হাতেই নিহত হতে হলো আমাদের পরিবারের সব সদস্যকে। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর আমাদের দেশে ফিরতে বাধা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রক্ষা করতে জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। দেশে যখন ফিরলাম, আমি মামলাও করতে পারিনি। কারণ মামলা করার অধিকার ছিল না। আইন করে বন্ধ করা হয়েছিল যে মামলা করতে পারব না। ২১ বছর পর সরকারে এসে তারপর মামলা করে বিচার করি। কাজেই যখন বিচার চান তখন এটাই মনে হয় আমাদের তো কত বছর লেগে গেল এই বিচার করতে। দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যায়, অবিচার তার প্রতিকার করার, হত্যার বিচার করার সুযোগ পেয়েছি। দিনের পর দিন আমাদের কাঁদতে হয়েছে।

ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। অনুষ্ঠানে শহীদ শেখ কামাল ‘আলোমুখী এক প্রাণ’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

শৈশবের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পিঠাপিঠি ভাইবোন ছিলাম। কামাল আমার দুই বছরের ছোট। একসঙ্গে উঠাবসা, খেলাধুলা, একসঙ্গে চলাফেরা, ঝগড়াঝাঁটি সবই আমরা করতাম। একসঙ্গে সাইকেল চালানো, একসঙ্গে ক্রিকেট খেলা, ব্যাডমিন্টন খেলা, যেহেতু আমরা দুই ভাই বোন কাছাকাছি। আমার পুতুল খেলায়ও ও যেমন আমার সঙ্গে থাকত। ওর সঙ্গে ছোটবেলা থেকে বাকি সব খেলায় আমিও ওর সঙ্গে একসঙ্গে খেলতাম।  বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শেখ কামালের সাহসী রাজনৈতিক ভূমিকার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে তার (শেখ কামাল) যেই সাহসী ভূমিকা, কারণ ছয় দফা দেওয়ার পর থেকে যে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয় এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় তারপর দেশে যেভাবে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল প্রতিটি সংগ্রামে কামালের অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় সে মিছিল নিয়ে আসত বটতলার মিটিংয়ে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেই সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটা আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখে গেছে। এমনকি ২৫ মার্চে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে, সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। শেখ হাসিনা বলেন, সে একদিকে যেমন ক্রীড়া সংগঠক তেমনি সাংস্কৃতিক জগতেও তার অনেক প্রতিভা রয়েছে। সে স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছে। কামাল ঢাকা থিয়েটারে অভিনয় করত, গান গাইত, গিটার বাজাত। খেলাধুলা পাঠে তার সব থেকে বড় অবদান। ধানমন্ডি এলাকায় ছেলে-মেয়েদের কোনোরকম খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল না। সেই উদ্যোগ নেয়, ওই অঞ্চলের সবাইকে নিয়ে গড়ে তোলে আবহানী ক্লাব। একটা মানুষের মাঝে এই যে বহুমুখী প্রতিভা এটা সত্যি বিরল ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর