মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আমলাতন্ত্রেই শেষ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সম্ভাবনা

প্রশ্ন উঠেছে, কর্মীর স্বার্থ নাকি রিক্রুটিং এজেন্সির স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারীতে শ্রমবাজারের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বড় বিকল্প হয়ে সামনে এসেছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে মালয়েশিয়া আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। মালয়েশিয়ার আগ্রহেই বৈঠকের আয়োজন হয় দুই দেশের কর্মকর্তাদের। সেই বৈঠকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তাবনাও নিয়ে আসে মালয়েশিয়া। আগেই দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় সেই প্রস্তাবনায় মৌখিক সম্মতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রিক্রুটিং এজেন্সির পরিধি বাড়ানোর কথা তোলে বাংলাদেশের আমলারা। ফলে আটকে যায় সবকিছু। অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায় সম্ভাবনার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। প্রশ্ন উঠেছে, শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা নাকি মহল বিশেষের স্বার্থরক্ষা- কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রণালয়ের কাজ কি বাংলাদেশের কর্মীদের স্বার্থ দেখা নাকি রিক্রুটিং এজেন্সির স্বার্থ দেখা। গত সপ্তাহে অনলাইনে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার   জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি সংক্রান্ত চুক্তি জি-টু-জি প্লাস এর মেয়াদ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী উল্লিখিত চুক্তির মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়াতে মৌখিক সম্মতির কথা জানান। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবনার বিপরীতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে এমওইউ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। কারণ বৈঠকে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয় সে বিষয়ে শেষ মুহূর্তে আপত্তি তোলেন বাংলাদেশের এক শীর্ষ আমলা। রিক্রুটিং এজেন্সির পরিধি বাড়ানো ছাড়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে নারাজির কথা তোলেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারাই। মালয়েশিয়া তার নিজের দেশে এজেন্সির সংখ্যা বাড়াবে কিনা এজন্য নিজেদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। ফলে বাংলাদেশের আমলার শেষ মুহূর্তের এই আপত্তি অনিশ্চিত করে তোলে সম্ভাবনার শ্রমবাজারকে। সংশ্লিষ্ট অভিবাসী কর্মী ও বিদেশ গমনেচ্ছুরা বলছেন, বাজার খোলার ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের সরকারকে। মালয়েশিয়া কর্মী নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে কিন্তু সেখানে আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি? মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল বাজার খোলার দিকে মনোযোগ দেওয়া। বাজার যেভাবেই খুলুক, তাতেই বাংলাদেশের কর্মীদের লাভ। বাংলাদেশের লাখ লাখ কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের স্বার্থ দেখাই মন্ত্রণালয়ের কাজ হওয়া উচিত। আর বাজার খুললে যে কোনো প্রক্রিয়ায় সব রিক্রুটিং এজেন্সিই ব্যবসা করতে পারত। কর্মী না গেলে বাজার না খুললে ক্ষতি সবারই। জানা যায়, কর্মীদের ক্রমাগত প্রতারিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো কর্মী নেওয়া বন্ধ হয়। এরপর নানা দেনদরবার করে ২০১২ সালে জি-টু-জি পদ্ধতিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ধীরগতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে যুক্ত করে জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতি শুরু করে মালয়েশিয়া। প্রায় ২ লাখ কর্মী মালয়েশিয়া গেলেও সেখানে গিয়ে প্রতারণার অভিযোগ আসেনি। তারপরও জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতিতে অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হলে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়ে তদন্ত করে মালয়েশিয়া। তদন্তে মালয়েশিয়ার কমিটি অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে বাজার পুনরায় চালুর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি জিটুজি প্লাস পদ্ধতির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় নতুন করে চুক্তির বিষয়ে আগ্রহ দেখায় মালয়েশিয়া। সর্বশেষ গত বছরের ১৫ অক্টোবর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের বৈঠকে মালয়েশিয়ার এই আগ্রহের কথা উঠে আসে। সিদ্ধান্ত হয়, সুষ্ঠু শ্রম অভিবাসনের স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্টের তালিকা মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে, সেই তালিকা থেকে মালয়েশিয়া উপযুক্ত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্ট নির্বাচন করবে। রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়ায় ডাটাবেজ থেকে কর্মী সংগ্রহ, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ন্যায্য সার্ভিস মূল্যসহ পুরো প্রক্রিয়া সমন্বিত অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে মনিটরিং করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেদিনই চুক্তির নতুন তারিখ নির্ধারণসহ নতুন চুক্তির কর্মপদ্ধতি ও রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া নির্ধারণে যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর এক দফায় পিছিয়ে গত সপ্তাহে আয়োজন হয় বৈঠক। কিন্তু বাংলাদেশের কর্মকর্তার আপত্তিতে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই উভয় দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক মুলতবি হয়ে যায়। কোনো নতুন দিনক্ষণ নির্ধারণ ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের এই মুলতবিতে শেষ হয়ে যায় সম্ভাবনা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর