বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বাণিজ্য সম্প্রসারণে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

বিজনেস কাউন্সিল উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাণিজ্য সম্প্রসারণে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নীতিগত সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক ভিডিওবার্তায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিল্পের কাঁচামাল, তুলা, সয়াবিন, গমসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি করি। এসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশে শূন্য শুল্ক উপভোগ করেন। দুই দেশের বাণিজ্যকে আরও সম্প্রসারণে পর্যাপ্ত নীতিগত সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ।’ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের যাত্রায় আমেরিকা একটি শক্তিশালী অংশীদার হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রপ্তানির বৃহত্তম গন্তব্য, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।’ বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দ্রুতবর্ধনশীল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং ক্রমবর্ধমান কানেকটিভিটির সঙ্গে ৪ বিলিয়ন লোকের বিশাল আঞ্চলিক বাজার মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি লাভজনক বিনিয়োগ গন্তব্য। সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধার্থে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত অবকাঠামো, আইনি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি করে যাচ্ছে। আমাদের সরকার দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে।’ পণ্য উৎপাদনের জন্য আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ব্যবহারের প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের জন্য বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা কমিয়েছে তখন লাখ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহারে সক্ষম আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ সরকারের ‘ভিশন ২০২১’-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ ৬০টির বেশি দেশে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আইসিটি পণ্য রপ্তানি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য ইউএসএআইডির কমপ্রিহেনসিভ প্রাইভেট সেক্টর মূল্যায়ন ২০১৯ অনুসারে বাংলাদেশে আইসিটি শিল্প ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে। বাংলাদেশের হাইটেক পার্কগুলোয় মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ২৮টি হাইটেক পার্ক তৈরি করছে। হাইটেক পার্কে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে আইসিটি খাতে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্য, শোষণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অসমাপ্ত কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত এক দশকে আমরা আর্থসামাজিক সূচকগুলোয় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্দান্ত স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করেছে।’ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বিজনেস কাউন্সিল গঠনের মধ্যদিয়ে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি ব্যবসায়িক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন।  বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য গঠিত ফোরাম টিকফা কার্যকর থাকলেও উভয় দেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার কোনো প্লাটফর্ম নেই। এই বিজনেস কাউন্সিল গঠনের মধ্য দিয়ে এখন থেকে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা নিজেদের সমস্যাগুলো তুলে ধরা ছাড়াও তা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে পারবেন। এর আগে গত মার্চে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার এ ধরনের কাউন্সিল গঠনের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শিগগিরই ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ চালু করা হবে। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে মার্কিন উদ্যোক্তাদের কাছে তুলে ধরা হবে এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা।

সর্বশেষ খবর