সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
রাষ্ট্রদূত পিটার হাস

আগামী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষ নেবে না

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

আগামী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষ নেবে না

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষ নেবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, আমি সুস্পষ্ট করতে চাই যে, আসন্ন নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ বেছে নেবে না। আমরা শুধু এমন একটি প্রক্রিয়ার প্রত্যাশা করি যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কে দেশ চালাবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু নির্বাচনের দিন ভোটদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কার্যত ইতোমধ্যে নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আবশ্যক হলো নাগরিকদের মতামত প্রকাশ, সাংবাদিকদের ভীতিহীন অনুসন্ধান এবং সুশীল সমাজের ব্যাপক পরিসরে জনমত গঠনের সুযোগ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রদূত বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবে মর্মে বিবৃতি দেওয়ায় আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে এ আইন সংস্কারে আইনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতিকেও আমি স্বাগত জানাই।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি সৎভাবে বলতে চাই, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও জবাবদিহিতা ছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। আমরা এমন একটি র‌্যাব চাই যারা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে যেমন কঠোর থাকবে তেমনি কঠোর থাকবে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে। কিন্তু র‌্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মানে এই নয় যে, আমরা জোরদার আইন প্রয়োগ বিষয়ে আমাদের ইতোমধ্যে স্থাপিত শক্তিশালী নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারব না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাব। সন্ত্রাসবাদ দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন পুলিশ, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী ইউনিট এবং চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতামূলক কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। প্রস্তাবিত চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ কার্যক্রমগুলো বেগবান হবে এবং পুলিশকে নতুন সাজ-সরঞ্জাম অনুদান প্রদান ত্বরান্বিত হবে।

পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে। গত ৫০ বছরে আমরা আমাদের সংস্কৃতি, জনগণ ও আমাদের অর্থনীতিকে সম্পৃক্ত করে একসঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করেছি। তাছাড়া আমাদের সম্পর্ককে বাংলাদেশ যত দ্রুত প্রসারিত ও গভীর করতে চাইবে, যুক্তরাষ্ট্রও তত দ্রুত এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। তবে ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য করলে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে পরিবর্তন আসবে। কারণটা সহজ- বদলে গেছে বাংলাদেশ।

রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, আমি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত তিনটি ক্ষেত্রে আলোকপাত করতে চাই- নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক। প্রথমত, আমরা আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারি। আমরা দুটি মৌলিক তথা ভিত্তিমূলক চুক্তিতেও যেতে পারি। দ্বিতীয়ত, আরেকটি ক্ষেত্র হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উৎসাহিতকরণ যেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। তৃতীয়ত, আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত।

সেমিনারে সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম বলেন, বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন। কারণ আমরা কী করছি, কোথায় অবস্থান করছি, এ জন্যই। অর্থনৈতিকভাবে আমরা দুই দেশেরই সম্পর্ক ভালো হচ্ছে। কিন্তু দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সবসময় দ্বিপক্ষীয়ভাবে সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চেয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু যোগ করতে চেয়েছে। তারপরও দুই দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, সন্ত্রাস দমন থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। বেশ কিছু সামরিক মহড়া দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে, এর মধ্যে সমুদ্রসীমা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিআইআইএসএস-এর চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেনের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রোকসানা কিবরিয়া মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। আরও বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএস-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বৈদেশিক দূতাবাসের প্রতিনিধি, সাবেক কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, একাডেমিয়া, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিরাও তাদের মতামত তুলে ধরেন।

সর্বশেষ খবর