সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রোজা পালন ও রুহানি রোগের চিকিৎসা

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রোজা পালন ও রুহানি রোগের চিকিৎসা

হায়াত ও মউত আমাদের মাঝে ব্যাপক পরিচিত শব্দ। মানুষ হায়াতকে যেমন ভালোবাসে তার থেকে বেশি মউতকে ভয় করে। যদি কখনো কারও মউতের খবর শুনে কেমন যেন অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ে’ নিজেও একদিন আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে যাবে তার স্বীকৃতি প্রদান করে। আল্লাহ তাআলা সুরা মুলকের ২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন। (তিনি মউত ও হায়াতকে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য কে নেক আমল অর্জনে অতি উত্তম।) মানুষের ভিতরে যতদিন রুহ বা আত্মা থাকবে ততদিন তিনি জীবিত। আর আল্লাহর নির্দেশে যখন রুহকে মালাকুল মউত কবজ করে নিয়ে যাবেন তখন এই মানুষটি মৃত। মানুষের দেহকে যেরূপ চিকিৎসা দ্বারা রব্বুল আলামিন ভালো রাখেন অনুরূপ রুহ বা আত্মাকেও রুহানি চিকিৎসা দ্বারা তিনি ভালো রাখেন। রুহানি চিকিৎসার জন্য রোজা পালন অনেক বড় মহাঔষধ। রোজা পালনে মানবাত্মার চিকিৎসা হয়। আত্মা পরিশুদ্ধতা পায়। পরিশুদ্ধ রুহ বা আত্মার দ্বারা প্রকৃত মুত্তাকি হওয়া যায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন। ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর মাহে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ফরজ ছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (সুরাতুল বাক্বারা : ১৮৩) একজন মানুষকে মুত্তাকি বানানোর পিছনে রমজানের রোজার অনেক বড় ভূমিকা আছে। হাদিসে ‘হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জানতে চাওয়া হয় কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে সত্যবাদী ও পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী, যা পাপাচার, অবিচার, প্রতারণা ও হিংসা থেকে মুক্ত। ইবনে মাজাহ হাদিস নম্বর ৪২১৬’। রমজানে রুহকে সংশোধন করে নিজেকে মুত্তাকি ও প্রকৃত মুমিন বানানোর সুবর্ণ সুযোগ। রমজানের সঙ্গে আত্মার সংশোধনের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। একটি বিষয় ভালোভাবে স্মরণ রাখতে হবে রমজানের ইবাদত অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক সওয়াব পূর্ণ। রমজানে একটি নফল আদায় করলে অন্যান্য মাসের একটি ফরজের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। আর একটি ফরজ আদায় করলে সত্তরটি ফরজের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। সুবহানআল্লাহ। রমজান মাস রহমতে পরিপূর্ণ। যার আত্মার সংশোধন যতবেশি হবে সে ততবেশি রহমত প্রাপ্ত হবে। রমজান মাসে যেমন একটি ভালো কাজের সাওয়াব দ্বিগুণ হয়, তেমনি একটি গুনাহের শাস্তিও দ্বিগুণ হয়। যেহেতু রমজান মাস তাকওয়ার মাস। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কালামে পাকে তাকওয়া অর্জন করার প্রতি জোর তাকিদ প্রদান করেছেন বারংবার। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের শুরুতেই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হুদাল্লিল মুত্তাক্বিন’। অর্থাৎ এই পবিত্র কোরআন মুত্তাকি তথা তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য হিদায়াত স্বরূপ। আর প্রকৃত মুত্তাকি তারাই হতে পারে যাদের আছে ‘ইসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি’। আত্মশুদ্ধি ব্যতিরেকে গুনাহ বর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে। যার রুহ বা আত্মা পরিশুদ্ধ আছে তার জন্য সব ধরনের পাপ বর্জন সহজ হয়। সহজে পরহেজগার-মুত্তাকি হওয়া যায়। এই ধরনের লোকদেরকে আল্লাহ তায়ালা বেশি ক্ষমা করেন, তাদের জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তির ফয়সালা করে থাকেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বহু রোজাদার ব্যক্তিকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে।’ (তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ) সুতরাং ইহ ও পরকালে সফলতা পেতে হলে আত্মার সংশোধন প্রয়োজন। এ জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় আল্লাহর কাছে অন্তরের খারাপি থেকে অধিক পরিমাণে মুক্তি চাইতেন এই বলে ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরকে আত্মরক্ষার ক্ষমতা দাও এবং তাকে পরিশুদ্ধ কর। তুমিই অন্তরের সর্বোত্তম পরিশোধনকারী এবং তুমিই তার অভিভাবক ও প্রতিপালক’। মিশকাত হাদিস নম্বর ২৪৬০। ইমান ও নেক আমল অন্তরের খাদ্য। শরীর যেমন খাদ্য পেয়ে শক্তি অর্জন করে তেমনি অন্তরও নেক আমলের মাধ্যমে শক্তি অর্জন করে। পরিশুদ্ধ হয়। এই নেক আমলের সম্পর্ক শুধু মাহে রমজানের সঙ্গেই নয় বরং এর সম্পর্ক সারা জীবনের সঙ্গে। রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে রুহ বা আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে খাঁটি মুসলমান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর