সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রতারণার টাকায় গুলশানে হোটেল বিলাসী ফ্ল্যাট!

সাখাওয়াত কাওসার

প্রতারণার টাকায় গড়েছেন রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে হোটেল। থাকেন নিকুঞ্জে নিজের বিলাসী ফ্ল্যাটে। বিনিয়োগ করেছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। শেয়ারবাজারেও রয়েছে বিপুল বিনিয়োগ। নিজের হোটেলেই দিন-রাত অভিসারে লিপ্ত হন সুন্দরী রমণীদের সঙ্গে। তার নাম মফিজুল হক। সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নাম করে দীর্ঘদিন ধরে হাতিয়েছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। 

ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে সহজ-সরল মানুষকে ঠকিয়েছেন দিনের পর দিন। টাকা নেওয়ার পরই তিনি চলে যেতেন আত্মগোপনে। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। এক ভুক্তভোগীর করা মামলায় অবশেষে ভয়ংকর এই প্রতারককে গতকাল ভোরে বাবু নামে তার এক সহযোগীসহ গুলশানের হোটেল থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই-এর ঢাকা দক্ষিণ বিভাগ।

পিবিআই সূত্র জানায়, মোজাফফর হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই প্রতারক চক্র পরিসংখ্যান ব্যুরোতে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রথমে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। পরবর্তীতে পরিসংখ্যান ব্যুরোতে চাকরি দিতে পারবে না জানিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ট্রলিম্যান হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আরও ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। পরে আরও টাকা লাগবে জানিয়ে এই ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোট ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। পিবিআই ঢাকা দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামসুজ্জামান বাবু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রেফতারের ঠিক কিছু সময় আগেও মফিজুল কয়েকজন নারী নিয়ে ফুর্তিতে মত্ত ছিলেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। তিনি একজন পেশাদার প্রতারক। তিনি চাকরি দেওয়ার নামে ও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া চলছে।

পিবিআই সূত্র বলছে, প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগী মোজাফফরকে প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী দিতে বলে। প্রার্থী প্রতি ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হবে বলে জানালে মোজাফফর প্রার্থী দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে প্রতারক চক্রের সদস্যরা তার আগের প্রার্থীর চাকরি হবে না এবং টাকাও ফেরত পাবে না জানিয়ে হুমকি-ধমকি দিলে তিনি গুলশান থানায় একটি মামলা (নম্বর ৩৯) দায়ের করেন। পরে পিবিআই অনুসন্ধান করে শনিবার রাতে গুলশান এলাকা থেকে মফিজুল ও বাবু চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। তাদের দুজনের বাড়িই রংপুরে।

পিবিআইর একজন কর্মকর্তা জানান, মফিজুল হক দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ৩০-৩৫ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি চাকরিপ্রার্থী প্রতি ৫ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিতেন। কখনো চাকরিপ্রার্থীদের ভুয়া নিয়োগপত্র দিতেন। কখনো টালবাহানা করে পুরো টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাতেই একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে।

পিবিআইর ওই কর্মকর্তা জানান, প্রতারণার টাকা দিয়ে মফিজুল গুলশানের হোটেল রীরা’র ১০ শতাংশ মালিকানা কিনেছেন। নিকেতন এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এ ছাড়া গ্রামের বাড়িতে ভূ-সম্পত্তিসহ ঢাকায় একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকানও চালান তিনি।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারের পর মফিজুলের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার নামে চুক্তিপত্র, ব্যাংক চেকসহ গত শুক্রবারে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ১১টি প্রবেশপত্র পাওয়া গেছে। পিবিআই কর্মকর্তাদের ধারণা, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রার্থীদের কাছ থেকেও চাকরি দেওয়ার নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন মফিজুল। তাকে রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর