বুধবার, ২৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন যাত্রা শুরু করল বিএনপি। গতকাল এ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্যের যাত্রা শুরু হয়েছে। আর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আন্দোলনকে যৌক্তিক পর্যায়ে না নেওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিকালে টানা পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন দুই দলের নেতারা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার যৌথ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নাগরিক ঐক্য ও বিএনপির ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক বৈঠক করব। এরপর আমরা যৌথভাবে কর্মসূচি শুরু করব। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আজ থেকে আমাদের নতুন বৃহত্তর ঐক্যের যাত্রা শুরু হলো। এই আন্দোলনকে যৌক্তিক পর্যায়ে না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই থামবে না।

বিকাল ৫টায় নাগরিক ঐক্যের অফিসে আসলে বিএনপি মহাসচিবসহ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান মাহমুদুর রহমান মান্না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও দলের সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন বৈঠকে অংশ নেন। অন্যদিকে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে তার দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার ও উপদেষ্টা এস এম আকরাম হোসেনসহ দলটির সিনিয়র নেতারা অংশ নেন। আলোচনা শেষে দুই দলের নেতাদের উপস্থিতিতে অফিসের সামনের খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে যৌথভাবে প্রেস ব্রিফিং করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মাহমুদুর রহমান মান্না।      

মান্না বলেন, আমাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। একটা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মৌলিক সবগুলো বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। আমরা একমত যে, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাব না এবং আর কোনো (জাতীয়) নির্বাচন হতেও দেওয়া হবে না। এ সরকারের বিদায়ের পর একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব। আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত যা কিছু করা দরকার, তার সবকিছুই করব। আশা করি বৃহত্তর এই ঐক্যের মাধ্যমে আমরা আন্দোলন, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন ও মানুষের ভোটাধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারব।

এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, আমাদের এই বৃহত্তর ঐক্য ও আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্যই হলো দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। এজন্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে আজ থেকে আমাদের বৃহত্তর ঐক্যের যাত্রা শুরু হলো। আশা করি খুব শিগগিরই অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে যৌথভাবে আমরা সেই আন্দোলনের সূচনা করতে পারব।

ঢাবিতে ছাত্রলীগের ছেলেরা তাণ্ডব শুরু করেছে : মির্জা ফখরুল

গতকাল দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের ছেলেরা হামলা চালিয়েছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবি করেছেন।

গত সোমবার রাত ৮টার দিকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার বিষয় জানাতে গতকাল এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা তাণ্ডব শুরু করেন। পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার জীবননাশের যে হুমকি দিয়েছেন, ছাত্রদল প্রথম দিনই এর প্রতিবাদ করেছে, সোমবার করেছে। সেখানেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছেন, হুমকি দিয়েছেন। ছাত্রদলকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া, ড. ইউনূসসহ দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সম্পর্কে শেখ হাসিনা যে অসম্মানজনক মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভা মনে করে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকির শামিল। কারণ, নির্বাহী বিভাগের প্রধান যখন পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন, তখন তা হত্যার নির্দেশের পর্যায়ে পড়ে। এই মন্তব্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

 

সর্বশেষ খবর