বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আইন অমান্যের প্রবণতা রোধে যুগোপযোগী হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন। প্রস্তাবিত আইনে আনা হচ্ছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ সংশোধন করে হচ্ছে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন ২০২২’। সংশোধিত আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) কোনো সদস্য এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না। বিভিন্ন সভা করে বিওটি সদস্যদের অ্যালাউন্স নেওয়ার নিয়মও বন্ধ করা হচ্ছে প্রস্তাবিত আইনে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- সভায় অংশগ্রহণ করেও কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে পারবেন না ট্রাস্টি সদস্যরা। এ ছাড়া প্রস্তাবিত খসড়ায় মালিকপক্ষ বা উদ্যোক্তাদের অযাচিত খবরদারি ঠেকাতে নানা ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। নতুন ধারা সংযোজন করে বিধান লঙ্ঘনের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে হাইওয়ে বা বাইপাস সড়কের পাশে নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত আইন সংশোধনের আহ্বায়ক কমিটি ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন ২০২২’ এর প্রস্তাবনার খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে মতামত জানতে বিভিন্ন স্টোকহোল্ডারের কাছে প্রস্তাবনাটি পাঠিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আইন সংশোধনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আইন অমান্যের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গভীর উদ্বেগের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুষ্ঠু তদারকি ও উচ্চশিক্ষায় সুশাসন এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আরও ক্ষমতায়ন ও আইনের কঠোর প্রয়োগ আবশ্যক। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ সংশোধন ও সময়োপযোগী করা আবশ্যক। বিদ্যমান আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদদের থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সংশোধিত আইনের প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে- বোর্ড অব ট্রাস্টিজে কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। সরকারের পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত ট্রাস্টি বোর্ডে কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। বোর্ডে ইউজিসি বা সরকারের একজন পর্যবেক্ষক মনোনয়নেরও বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ‘ইন্টারন্যাশনাল’ নাম যুক্ত থাকলেও ভবিষ্যতে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক নাম ব্যবহার করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলেও সংশোধন আনা হচ্ছে। কাউন্সিলের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের পরিচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইসহ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককেও। পরিবর্তন আনা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটিতেও। পরিবর্তন আনা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের যোগ্যতায়ও। বলা হয়েছে- এ পদের জন্য যোগ্য ব্যক্তির স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ১৮ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। শুধু প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞদের উপাচার্য হওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে না প্রস্তাবিত আইনে। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ পাওয়া অধ্যাপকের উপাচার্য পদে আসীন হওয়ার সুযোগ থাকবে না। টিউশন ফি নৈরাজ্যও বন্ধ হবে নতুন আইনে। সংশোধিত আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- কোনো প্রোগ্রামে বা কোর্সে পড়ার বেতন কাঠামো দেখে শিক্ষার্থীরা ভর্তির হওয়ার পর সেই প্রোগ্রাম বা কোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফি বাড়াতে পারবে না। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তি কোনো বিধান (যা নিয়ে আইনে পৃথকভাবে বলা নেই) লঙ্ঘন করলে প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে ইউজিসি অভিযুক্ত ব্যক্তি বা বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘ সময় পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এজন্য সাধুবাদ জানাই। দেশে নামসর্বস্ব কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোতে পড়াশোনার কোনো বালাই নেই। এগুলো সার্টিফিকেট- বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকে। এদের বিরুদ্ধে আইনে কঠোর ব্যবস্থার ধারা সংযোজন করতে হবে। এ ছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়কে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায়। নামে-বেনামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে বিভিন্ন পদ দখল করে থাকে। ট্রাস্টিবোর্ডের অযাচিত হস্তক্ষেপেও শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। প্রস্তাবিত আইনে ট্রাস্টিদের এমন হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। আইনের ধারা সংযোজন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, আইনের প্রয়োগ করার মতো ক্ষমতাও দিতে হবে ইউজিসিকে। ইউজিসির ক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। বর্তমান আইনে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সাময়িক অনুমতি পাওয়ার পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগে বিদ্যমান আইনে ভবনের আয়তন ২৫ হাজার বর্গফুটের বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে- কমপক্ষে এক লাখ বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়াকৃত ভবন থাকতে হবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সংরক্ষিত তহবিলের পরিমাণও প্রস্তাবিত খসড়ায় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে- ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য কমপক্ষে ৮ কোটি টাকা ও অন্য মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা এবং অন্য এলাকার জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যাংকে দায়মুক্ত অবস্থায় জমা রাখতে হবে। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা ও অন্য মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা এবং অন্য এলাকার জন্য দেড় কোটি টাকা ব্যাংকে দায়মুক্ত অবস্থায় জমা রাখার নিয়ম রয়েছে। দুই একর থেকে বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কমপক্ষে পাঁচ একর নিষ্কণ্টক, অখণ্ড ও দায়মুক্ত জমি থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিন শতাংশ শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান এবং তিন শতাংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। আইনের খসড়ায় কোটার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি/নাতনিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের কোটা ৩ থেকে ৬ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত আইন সংশোধনের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ প্রতিবেদককে বলেন, আইন সংশোধনের জন্য প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও নানা অনিয়ম ঠেকাতে বেশকিছু প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার ব্যাঘাত ঘটে। এটিও বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সংশোধিত আইনের প্রস্তাবে।
শিরোনাম
- আইপিএলে অনিশ্চয়তায় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা
- দিল্লির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি পিন্ডির দাসত্ব করতে নয়: আসিফ মাহমুদ
- এল ক্লাসিকোতে হ্যাটট্রিক করে এমবাপ্পের নতুন রেকর্ড
- তুরস্ক যে কারণে ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়
- ব্যক্তি বা সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন
- 'রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ. লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো'
- তীব্র তাপদাহে আক্রান্তদের জন্য মহাখালীতে হিটস্ট্রোক সেন্টার চালু
- কর ফাঁকির সুযোগ নেই, সবাইকে কর দিতে হবে: ডিএনসিসি প্রশাসক
- ১৫ বা তার কম বয়সেই যৌন সহিংসতার শিকার প্রতি পাঁচজন নারীর একজন
- কুয়াকাটায় নানা আয়োজনে বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত
- কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে তিন কৃষকের মৃত্যু
- কলমাকান্দায় রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞাত ব্যক্তি উদ্ধার
- আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি বরিশাল নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের
- উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ববিতে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা
- আল-নাসর ছাড়ার পথে রোনালদো?
- পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ নির্দেশনা
- কিশোর কর্মচারীর গায়ে ভাতের গরম মাড় ঢেলে দিল বাবুর্চি
- পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতায় ভারত ‘অপ্রস্তুত, খানিকটা বিস্মিত’: ব্রিটিশ বিশ্লেষক
- নাটোরে জামায়াতের আনন্দ মিছিল
- ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, দেশে বিভক্তির কোনো সুযোগ থাকবে না : আমীর খসরু
পরিবর্তন আসছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে
♦ ট্রাস্টি বোর্ডে থাকবেন শিক্ষাবিদ ♦ হস্তক্ষেপ বন্ধ মালিকদের ♦ আইন অমান্যে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
আকতারুজ্জামান
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর