রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

আরও জটিল হতে পারে অর্থনৈতিক সংকট

মানিক মুনতাসির

আরও জটিল হতে পারে অর্থনৈতিক সংকট

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ

অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো কার্যকর করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, অর্থ পাচার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি সংকট, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স          প্রবৃদ্ধি এসব সমস্যা আমরা অনেক আগেই সমাধান করতে পারতাম।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তবে শেষ সময়ে এসেও সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। ডলার খরচ কমানোর চেষ্টা করছে। ব্যাংক খাতেও কিছুটা নজরদারি বাড়িয়েছে। অবশ্য খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে নানা কথা রয়েছে। সরকার সামগ্রিকভাবে ব্যয় কমাচ্ছে। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা খুব দরকার। আর যদি কার্যকর করতে না পারে তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিলই হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এটা যে বাড়বে তা তো আগেই বোঝা গিয়েছিল। কেননা কয়েক মাস ধরেই তো দ্রব্যমূল্য বাড়ছিল। কিন্তু আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। খেলাপি ঋণ কমানো বা অর্থ পাচার ঠেকাতে সরকার কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের বহুমুখীকরণেও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আমদানি বাড়ায় রিজার্ভ যখন কমতে কমতে ৪৬ থেকে ৪৫, ৪৫ থেকে ৪৪ বা ৪১ বিলিয়ন ডলারে এলো, আমরা তখন কোনো উদ্যোগ নিলাম না। এখন ৪০-এর নিচে যখন নামল, এমনকি কার্যত সেটা ৩৩ বা ৩২ তখন বাংলাদেশ ব্যাংক হইচই শুরু করল। কিছু উদ্যোগও নিল। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিল। গাড়ির খরচ, জ্বালানি খরচ কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হলো। কিন্তু এগুলো আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। রেমিট্যান্স বাড়াতে তো আমরা সিরিয়াস কোনো চিন্তাই করি না। প্রবাসীদের অসুবিধা নিয়ে ভাবী না।’ সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখন টাকার অবমূল্যায়ন করছি। ডলার ধরে রাখতে আমদানি কমাচ্ছি। খেলাপি ঋণ কমাতে তৎপরতা দেখাচ্ছি। কিন্তু এগুলো আরও আগে করা উচিত ছিল। এখন যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার প্রভাব তো এখনই পড়বে না। অন্তত তিন, চার, ছয় মাস সময়ের প্রয়োজন। সে পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে এক দুই বছর পর আবার বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল। সামগ্রিকভাবে বলা যায় আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে বেশ বিলম্বই হয়ে গেছে। এখনো প্রত্যাশা করা যায় আমরা ভালো কিছু করতে পারব। এজন্য পাচার ঠেকাতে হবে। আমদানি কমছে। আরও কমাতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। রপ্তানির বাজারটা বহুমুখী করতে হবে। ঋণ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। এ সবকিছু করার পর আরও যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর