বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
সংকট নিয়ে যত কথা

ঋণ নেব কি না শর্ত দেখে বিবেচনা : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কিছুদিন পর বিদেশি ঋণের চাপ থাকবে না, ঋণও থাকবে না। বাংলাদেশ তখন আবার ঋণ দিতে পারবে। এ আশাবাদ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। তিনি বলেন, অল্পদিনের মধ্যে খারাপ কোনো অবস্থা হয়নি। আমরা যখন অর্থনীতি ম্যানেজ করি আমাদের বিভিন্ন পারসপেক্টিভ (পরিপ্রেক্ষিত) দেখতে হয়। এখন আমাদের ঋণ দরকার। সামনে আরও কিছুদিন এ সমস্যা থাকবে। এরপর সমস্যা কেটে যাবে। তখন আর ঋণ থাকবে না। মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা তো বলেছিলাম ঋণ দেব। দিয়েছিলামও। আমি আবারও বলছি আমরা ঋণ দিতে পারব।  গতকাল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অনলাইন ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন।  আইএমএফ’এর কাছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, আমার চাহিদা সবাই জানতে পারলে আমার ওপর খরচটা বেশি দেবে, সে জন্যই প্রয়োজন নেই বলেছি। এভাবেই আমাদের ম্যানেজ করতে হয়। এটি একটি কৌশলও। ঋণের বিষয়টি যাতে কোনোভাবেই আমাদের বিপক্ষে না যায় সেজন্য এমন কৌশল কাজে লাগাতে হয়। আমরা অর্থ চাই, আমরা সেটা বলেছি। কিন্তু কত লাগবে আমরা সেটি বলিনি। ‘আইএমএফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনা শেষে আপনি বলেছিলেন, আমরা আইএমএফের কাছ থেকে এখন কোনো ঋণ নেব না। আমাদের অর্র্থনীতি ভালো অবস্থানে আছে। এরই মধ্যে এমনকি পরিস্থিতি হলো যে আপনি আবার আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছেন?’ এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের ঋণ দরকার। সে জন্য আমরা আইএমএফের কাছে আবেদন করেছি। তখন আমরা যদি টাকা চাইতাম, আইএমএফ নানা শর্ত দিত। দর-কষাকষির জন্য আমরা সুযোগ পেতাম না। সে জন্য তখন চাইনি। এটা দেশের স্বার্থে করা হয়েছে। ঋণ নিলে সবার জানার অধিকার আছে। আমার কাজ হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দেওয়া। আইএমএফের কাছে ঋণের বিষয়ে চিঠি দেওয়া হলেও মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে দেওয়া হয়নি- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা বলা হবেই। এতে সুবিধা হলো সে সময় আমাদের মিটিং চলছে। তাদের টিম এখানে আছে। আমরা চেয়েছি তারা আমাদের সক্ষমতা দেখুক। তারা বাংলাদেশকে ঋণ দেবে, সে জন্য তাদের সুযোগটা দিয়েছি। আমরা সেটা ভালোভাবেই হ্যান্ডেল করেছি।

প্রসঙ্গ ডলার সংকট : ডলার সংকট মোকাবিলায় অনেক উদ্যোগ নেওয়ার পরও কোনো কাজে আসছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, কাজ হবে একটু সময় লাগবে। রপ্তানি বাড়ছে, রেমিট্যান্সও বাড়ছে। গত বছর রেমিট্যান্স কিছুটা কম হলেও চলতি অর্থবছর আশা করছি ভালো রেমিট্যান্স পাব। রেমিট্যান্স ও রপ্তানির মাধ্যমেই ডলারের চাহিদা মেটানো হবে। কিছু আমদানিকারক মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে কারসাজি করে আমদানি করছে। আমরা এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখছি, তবে ডলারের মূল্য নির্ধারিত হবে চাহিদার ও জোগানের ভিত্তিতেই। যদি কেউ ডলার নিয়ে কারসাজি করে থাকে সেটাও খুঁজে বের করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গ ব্যাংক সুদ : ব্যাংক খাতে ৯/৬ সুদহার উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে আইএমএফ। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন ভালো অবস্থানে আছে। যদি আমরা ওই সময় ৯/৬ নির্ধারিত না করতাম তাহলে কভিডের সময় ছোট, বড়, মাঝারি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারত না। ভয়াবহ বেকারত্ব সৃষ্টি হতো। আমি মনে করি, ব্যাংক খাতে আমানত ও সুদের হার ৯/৬ করার উদ্যোগটি ভালো। তিনি আরও বলেন, ‘সুদহার ৯/৬ করার কারণে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। বেসরকারি খাতও চাঙা হয়েছে। সুতরাং আইএমএফ যে কথা বলেছে, তা সঠিক নয়।

ঋণ চাওয়া হবে অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছেও : আইএমএফের পাশাপাশি অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু আইএমএফ নয়; বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবিসহ সব উন্নয়ন সহযোগীর কাছে ঋণ সহায়তা চাইব। আমাদের প্রতি তাদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে। তারা আমাদের ঋণ দিতে চায়। কারণ বাংলাদেশ একটি ভালো দেশ। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে। তারা জানে, বাংলাদেশ সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। তিনি বলেন, আমরা তাদের প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে যেগুলো আমাদের কাছে সহজ ও সুদবিহীন মনে হবে সেগুলোই গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর