বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কোথায় দুর্নীতি সুনির্দিষ্ট বলুন

কুইক রেন্টাল না হলে মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হতো না

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোথায় দুর্নীতি সুনির্দিষ্ট বলুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন হ্রাস করা হয়। মানুষ বিদ্যুৎ পেত না। দিনের পর দিন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। ইন্ডাস্ট্রিগুলো চলতে পারত না। আমরা এসে এসব সমস্যার সমাধান করি। কুইক রেন্টাল না হলে মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হতো না।

গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে গণফোরামের মোকাব্বির খান ও সরকারি দলের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে এই বিদ্যুতের ওপর দুর্নীতি হয়েছিল বলেই বিশ্বব্যাংক টাকা দেওয়া বন্ধ করেছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দুর্নীতির কারণে অর্থ বন্ধ হয়।  যেখানে বড় বড় মহারথীরাই দুর্নীতির খোঁজ পায়নি, সেখানে আমাদের কিছু লোক ভাঙা রেকর্ডের মতো দুর্নীতির কথা, কুইক রেন্টাল, কুইক রেন্টাল করে বাজিয়েই যাচ্ছে। কোথায়, কবে, কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে-তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে। আমি তার উত্তর দেব।

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মজুদদারি, কালোবাজারি এবং এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরি করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং সামনেও  নেব। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের সুবিধাভোগী এ দেশের সাধারণ মানুষ। মেগা প্রকল্প তো অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার করতে সক্ষম হয়েছে। পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। মেট্রোরেলও সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে আমি আমার প্রশ্নকর্তাকে চ্যালেঞ্জ করছি, কোথায়, কখন, কতটুকু দুর্নীতি হয়েছে সেই কথাটা তাকে এখানে (সংসদে) স্পষ্ট বলতে হবে। তার জবাব আমি এখানে দেব। একটি কথা আমি এখানে স্পষ্ট বলতে চাই, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। সেখানে কি কোনো দুর্নীতি হয়েছিল? দুর্নীতি হয় নাই। তারা প্রমাণ করতে পারে নাই। এটা শুধু আমার কথা না। কানাডার ফেডারেল কোর্টে যে মামলা হয়, সেই রায়ে বলা হয়েছে সব অভিযোগ মিথ্যা, কোনো অভিযোগই সত্য না। সবগুলোই ভুয়া।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যদি দুর্নীতি হতো তাহলে এত অল্প সময়ে ইতোমধ্যে এত বড় বড় প্রজেক্টের কাজ শেষ হতো কোনো দিন? এর আগে কখনো হয়েছে? তিনি বলেন, প্রশ্নকর্তা সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। তার একটি সেকেন্ড হোম রয়েছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম দেড় শ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে ইনফ্লেশন ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যেকটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয় এবং প্রতিটি বিল পরীক্ষা করা হয়। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে কিছু দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ একটু কমিয়ে দেওয়া হলেই চারদিকে হাহাকার উঠেছিল। সে জন্যই তো কুইক রেন্টালের প্রয়োজন। যারা এসব অভিযোগ করছে, তাদের বিদ্যুৎ সংযোগটা যদি বন্ধ করে দিই, তা হলে দেখি কী হয়!

আওয়ামী লীগকে উৎখাত করার মতো শক্তি দেশে নেই : জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শেকড় অনেক গভীরে, উৎখাত করার মতো শক্তি দেশে  নেই। আওয়ামী লীগকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। আইয়ুব খান চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়া চেষ্টা করেছে, জেনারেল এরশাদ চেষ্টা করেছে, খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে পারেনি। পারবেও না। তিনি বলেন, একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছিল, ঠিক সেইভাবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলাসহ দেশব্যাপী নাশকতা চালিয়েছে। এরপর ১ কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরির মাধ্যমে তারা আবারও ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। জনগণ তা প্রতিহত করেছিল। বিএনপির চরম দুঃশাসনের কারণে এক-এগারো এসেছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা একটানা তৃতীয়বার-১৪ বছর ক্ষমতায়। এই ১৪ বছরের আগে বাংলাদেশ কী ছিল? বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে কী ছিল, এরশাদের আমলে কী ছিল? ’৭৫-এর পর থেকে বাংলাদেশ কী ছিল?

আওয়ামী লীগের সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে সারা বিশ্বে খাদ্যের দারুণ অভাব  দেখা দেবে। যার কিছু আভাস আমরা পাচ্ছি। তবে আমাদের খাদ্য চাহিদা  যেন আমাদের নিজেদের আওতায় রাখতে পারি সে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আমি উৎপাদন বাড়াতে, কোনো জমি যাতে পড়ে না থাকে, যে যা পারে উৎপাদন করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। লক্ষ্য করা যাচ্ছে মানুষ সাড়া দিয়েছে। তিনি বলেন, রোজা বা উৎসবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার  চেষ্টা করা হয়। বিশ্বের কোথাও উৎসবের সময় জিনিসের দাম বাড়ানোর  চেষ্টা হয় না। কিছু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে চাহিদা বাড়ানোর  চেষ্টা করতে চান।

আহসানুল ইসলাম টিটোর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম যাতে না বাড়ে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।  কেউ যদি মজুদদারি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা চাই রোজার মাসে মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। কেউ মজুদ করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১০ হাজার একর জমি আবাদ করতে পারব : জাতীয় পার্টির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন চাষ করে তখন অর্থকরী ফসলের দিকে দৃষ্টি  দেয়। এ কথা ঠিক আমাদের অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। আমার এলাকার কথাই বলি, সেখানে অনেক অনাবাদি জমি আছে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এসব জমি চাষের উপযোগী করার। ১০ হাজার একর জমি আবাদ করতে পারব। সে ব্যবস্থা নিয়েছি।

মূল্যস্ফীতি হ্রাস হওয়ায় জনমনে স্বস্তি এসেছে : আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটোর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে মূল্যস্ফীতির প্রভাব হ্রাস  পেয়েছে ও জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ কারণে রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে জ্বালানি তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে।

সর্বশেষ খবর