মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

জামানত হারানোর দাবি নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ

পরিস্থিতি সামলালেন স্পিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত সংক্রান্ত সরকারদলীয় এমপি মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের জের ধরে গতকাল রাতে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপিরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। তখন সংসদ অধিবেশন পরিচালনা করছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। মাইক ছাড়াই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে অধিবেশন কক্ষে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে অধিবেশন কক্ষে ঢুকে পরিস্থিতি সামলান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর তিনি অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

মাগরিবের নামাজের বিরতির পর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় ফ্লোর পান লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মো. মোতাহার হোসেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রথমবার ৫৫ হাজার ভোটে জিতেছিলাম, গতবার জিতেছি ২ লাখ ৬৩ হাজার ভোটে। আবার গত নির্বাচনে আমার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উনি মাত্র ৭ হাজার ভোট পেয়েছিলেন এবং জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। আমি ছয়বার এমপি হয়েছি, আরও একবার হতে পারতাম। কিন্তু আগের দিন জিতেছি ১৮ হাজার ভোটে, পরদিন এরশাদ সাহেব জিতেছেন ২২ হাজার ভোটে। গতবার ভোটাররা এরশাদ সাহেবকে তার জবাব দিয়েছেন।

এ বক্তব্য নিয়ে অধিবেশন কক্ষে উত্তেজনার শুরু। জাতীয় পার্টির এমপিরা দাঁড়িয়ে মাইক ছাড়াই ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, কাজী ফিরোজ রশীদসহ অন্যরা বক্তব্যের জন্য মাইক দাবি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্পিকার মোতাহার হোসেনের মাইক বন্ধ করে প্রথমে কাজী ফিরোজ রশীদ ও পরে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে এক মিনিট করে ফ্লোর দেন। এ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা হৈচৈ শুরু করেন। বিরোধী দলের সদস্যরা মোতাহার হোসেনের বক্তব্য এক্সপাঞ্চ করার দাবি জানানোর পাশাপাশি সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। স্পিকারের আসনে থাকা শামসুল হক টুকু আপত্তিকর কোনো শব্দ থাকলে এক্সপাঞ্চ হবে এবং পয়েন্ট অব অর্ডারে বিস্তারিত বলার সুযোগ দেওয়া হবে জানিয়ে বসার অনুরোধ করতে থাকেন। এ সময় সংসদে এসে স্পিকারের আসনে বসে পরিস্থিতি শান্ত করেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় স্পিকার বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ আপনারা বসুন। বিরোধী দলের কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা আপনি বসুন। হাউসের একটি ডেকোরম আছে। এখানে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা হচ্ছে। সেখানে এক বক্তা তার বক্তব্য রাখছেন। সেই বক্তব্যে যদি আপত্তিকর কিছু থাকে, সে বিষয়টি আপনারা উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। এরপর আবারও আলোচনায় অংশ নিয়ে মোতাহার হোসেন তার বক্তব্যে অনড় থাকেন এবং এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল বলে দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বিমানে এক দিন যাওয়ার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে এরশাদ সাহেব আমাকে বলেছিলেন, আপনি আমার জামানত বাজেয়াপ্ত করলেন।’ পরে মসিউর রহমান রাঙ্গা ও কাজী ফিরোজ রশীদ পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখেন এবং ওই বক্তব্য এক্সপাঞ্চের দাবি জানান। সর্বশেষ স্পিকার ওই বক্তব্যে তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে তা এক্সপাঞ্চ করা হবে বলে সংসদকে জানান এবং সাধারণ আলোচনায় ফিরে যান।

এর আগে ফ্লোর নিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদ। তিনি এই সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। এই এরশাদ সাহেব রংপুরের মাটিতে কোনো দিন হারেননি। কারাগারে বসে পাঁচটি আসনে জিতেছেন তিনি। যে নির্বাচনে এরশাদ সাহেব দাঁড়াননি, সেই নির্বাচনে উনি (মোতাহার হোসেন) জামানত বাজেয়াপ্ত করলেন কীভাবে? এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত করার মতো কোনো সন্তানের রংপুরে এখনো জন্ম হয়নি। আমার দাবি, ওই কথাগুলো এক্সপাঞ্চ করতে হবে এবং তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে রংপুরের মাটিতে উনার সমস্যা হবে।’

সর্বশেষ খবর