শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প : ১০১ ঘণ্টা পরও ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার

নিহতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়াল

প্রতিদিন ডেস্ক

নিহতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়াল

ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর গতকাল দুপুর পর্যন্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার ৯৯১ জন এবং সিরিয়ায় এ সংখ্যা ৩ হাজার ৩৭৭ জন। এদিকে উদ্ধারকর্মীরা তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের ইস্কেন্দেরুনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ১০১ ঘণ্টা পর একই পরিবারের ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ অভিযোগ করেছেন, বহু দেশ মার্কিন চাপের কারণে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিরিয়াকে সাহায্য করছে না। ফলে বিধ্বস্ত এলাকায় আরেক মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি।

খবরে বলা হয়, তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কর্তৃপক্ষের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দুই দেশে গতকাল দুপুর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা পৌঁছায় ২২ হাজার ৩৭৫ জনে। ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ১০০টিরও বেশি আফটারশক হয়েছিল, যার একটি ছিল ৭.৫ মাত্রার। মৃত্যু ছাড়াও ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত সিরিয়া ও তুরস্কে অন্তত ৮০ হাজার ৭৬৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।  এদিকে উদ্ধারকর্মীরা চতুর্থ দিনেও ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যদিও কাউকেই জীবিত পাওয়া আশা করা হচ্ছে না। তারপরও উদ্ধারকর্মীরা গতকাল তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের ইস্কেন্দেরুনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ১০১ ঘণ্টা পর একই পরিবারের ছয়জনকে জীবিত বের করে এনেছেন। কর্মীরা জানান,  ইস্কেন্দেরুনের ধসে পড়া ভবনটির একটি পকেটে ছয়জনকে একসঙ্গে জীবিত পাওয়া যায়। তারা একই পরিবারের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের সন্ধান পাওয়ায় অন্য উদ্ধারকর্মীরাও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং তারা শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি তুর্কি কর্তৃপক্ষ। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তুরস্ক-সিরিয়ায় গত সোমবারের ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চার দিনে অনেককে জীবিত বের করে আনা গেলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্ষীণ হয়ে আসছে। তীব্র শীত হাজার হাজার বেঁচে থাকা মানুষকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তারা এখন আশ্রয়, খাদ্য ও পানীয় ছাড়াই আছেন।

এদিকে তুরস্কের সীমান্তবর্তী দেশ সিরিয়াতেও ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ থেমে নেই। তবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির সংকট ও এলাকাটির রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক পুরনো ভবন ধসে সিরিয়াতেই প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোক মারা গেছেন। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে আহতদের চাপ। তাদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। এমন পরিস্থিতিতে সিরিয়ার আলেপ্পোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে আহতদের  দেখতে যান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। এ সময় তিনি ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিরিয়ায় যেসব দেশ ত্রাণ এবং উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

এ ছাড়া তিনি লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বু হাবিবের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, বহু দেশ সিরিয়াকে সাহায্য না করার ব্যাপারে মার্কিন চাপের মুখে রয়েছে। এ বিষয়ে রাশিয়ায় নিযুক্ত সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত বাশার আল-জাফারি তার দেশের জনগণের জন্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে বৈষম্য করার নিন্দা ও সমালোচনা করে বলেন, ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়া- দুই দেশই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বেশিরভাগ সাহায্য-সহযোগিতা তুরস্কতে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে সিরিয়া বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়ায় ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিরাট একটি বাধা।

সর্বশেষ খবর