সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিমানবন্দর থেকে মিরপুর ১৫ মিনিটে কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধন

যত উজান হোক এগিয়ে যাবে নৌকা : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যত উজান হোক এগিয়ে যাবে নৌকা : প্রধানমন্ত্রী

উদ্বোধন করার পর গাড়ি চলছে কালশী ফ্লাইওভারে। গতকাল তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা এনেছে, নৌকা মার্কায় উন্নয়ন দিয়েছে, সামনেও যত উজান ঠেলে হোক, নৌকা মার্কা এগিয়ে যাবে।

গতকাল সকালে মিরপুরের কালশী মোড় বালুর মাঠে আয়োজিত কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছি বলেই উন্নয়ন করতে পেরেছি। আর আগামীর বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। আমরা সম্মানের সঙ্গে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। তিনি বলেন, ভোট চোরকে জনগণ কখনো গ্রহণ করে না। বিএনপি অনেক কথা বলে। ২০০৮-এর নির্বাচনে তারা মাত্র ২৯টা আসন পেয়েছিল, আর একটা পেয়েছিল উপনির্বাচনে। অর্থাৎ ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টা পেয়েছিল। তিনি বলেন, কেউ যদি ভোট চুরি করে, এ দেশের মানুষ মেনে নেয় না। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কিন্তু খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল। পরে জনগণের আন্দোলনের ফলে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। এরপর ২০০১ সালে দুর্নীতি আর জঙ্গিবাদে বাংলাদেশের মর্যাদা ধূলিসাৎ করেছে।

এর আগে সকালে বালুর মাঠে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাগরিক সমাবেশ, যেটি পরবর্তীতে বিশাল জনসভায় রূপলাভ করে সেখানে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ফ্লাইওভার এবং রাস্তার উদ্বোধন করেন। মিরপুরে ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার কালশী ফ্লাইওভার যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ইসিবি স্কয়ার থেকে কালশী পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার প্রসারিত রাস্তাও উদ্বোধন করেন, যা চার লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীত এবং প্রশস্তকরণ করা হয়েছে।

ফ্লাইওভারটি মিরপুর, ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মহাখালী, বনানী, উত্তরা এবং বিমানবন্দরের মধ্যে যোগাযোগ আরও উন্নত করবে। এতে বিমানবন্দর থেকে মিরপুর পৌঁছাতে ১৫ মিনিট লাগবে। একনেক ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি এই প্রকল্পটি অনুমোদন করে, যার অধীনে ইসিবি স্কয়ার থেকে কালশী পর্যন্ত একটি ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি নির্মাণের অনুমতি প্রদান করে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড) প্রায় ১ হাজার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, ২০২৩ সালের জুনে নির্ধারিত সময়ের চার মাস আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বিবরণী অনুযায়ী, ফ্লাইওভারটি ইংরেজি ‘ওয়াই’ অক্ষরের মতো। এই প্রকল্পে যাত্রীদের ভ্রমণ সহজ করার লক্ষ্যে আগের চার লেনবিশিষ্ট রাস্তাগুলোকে ছয় লেন করা হয়েছে।

প্রধান চার লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি ইসিবি স্কয়ার থেকে কালশী ও মিরপুরের ডিওএইচএস হয়ে গেছে। দুই লেনবিশিষ্ট র‌্যাম্পটি কালশী মোড় থেকে শুরু হয়ে কালশী সড়কে যাবে। প্রকল্পটির আওতায় একটি পিসি গ্রিডার ব্রিজ, দুটি ফুটওভার ব্রিজ, একটি পাবলিক টয়লেট, দুটি পুলিশ বক্স, একটি ৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন, একটি ১ হাজার ৭৫৫ মিটার আরসিসি পাইপ ড্রেন, ৩ হাজার ৩৮৩ মিটার যোগাযোগ তার, পৃথক সাইকেল লেন ও ছয়টি বাস বে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি হলে মিরপুর, ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মহাখালী, বনানী, উত্তরা ও বিমানবন্দর সড়কের যানজট লাঘব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে গৌরবময় অবদানের কারণে হারুন মোল্লার নামে কালশী ফ্লাইওভারের নামকরণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ঢাকা শহরকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলব। সরকার জনগণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য ও চমৎকার সবুজে ভরা একটি দেশ। ফুল, ফল, পাখির অত্যন্ত সৌন্দর্যে ভরা এই দেশটিকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলব। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ব এবং ঢাকা সিটিও স্মার্ট সিটি হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সে জন্য বহু পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছি বলেই বাংলাদেশকে আজ উন্নত করতে পেরেছি। জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি এবং এই মর্যাদাকে ধরে রেখেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা হলো এর পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ভালো সংযোগ না থাকা। তাঁর সরকার রাজধানীর এই অংশে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের পর কালশী ফ্লাইওভার ও ছয় লেনের সড়ক চালু হলে ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে যাবে। ঢাকা উত্তর সিটির উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১১ সালে ঢাকা শহরকে দুই ভাগ করার পর গত ১২ বছরে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ২৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গত কয়েক বছরে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর সৌন্দর্যায়ন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়ন, সড়ক, সেতু ও ফ্লাইওভারের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ রাজধানীর যোগাযোগ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কালশী বালুর মাঠকে একটি বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। সেখানে শিশু ও যুবকদের খেলার মাঠ এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের চলাচলের জন্য হাঁটার পথ থাকবে। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও ঢাকায় ইতোমধ্যে মেট্রোরেল চালু, কম্যুটার রেলওয়ে, ভূগর্ভস্থ টানেল, ঢাকা শহরের চারদিকে রিং রোড এবং ওয়াটারওয়ে নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। গত নভেম্বরে এক দিনে ১০০ সেতু উদ্বোধন এবং ডিসেম্বরে এক দিনে শত সড়ক/মহাসড়ক উদ্বোধন করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওয়ার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা, ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ সরকার সম্পন্ন করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল খুব শিগগিরই উদ্বোধন করা হবে। এয়ারপোর্ট থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে এ বছরই যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, আরিচা মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। যমুনা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যমুনা নদীর ওপর যখন সেতু করতে যাই তখন রেলসেতুও সংযুক্ত করতে চাই। বিশ্বব্যাংক বাধা দিয়েছিল। তারা বলেছে, সেটা লাভজনক হবে না। এখন আবার বিশ্বব্যাংকই ফিরে এসেছে, যমুনা নদীতে রেলসেতু করতে। আমি অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে দেশটা আমাদের। কোথায় কী হবে, হবে না, কী লাগবে, লাগবে না এটা আমরাই ভালো বুঝি। এই ধারণাটা আমাদের থাকতে হবে।

উর্দুভাষীদের জন্য উন্নতমানের ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনাও তাঁর সরকারের রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। তিনি বলেন, সুন্দরভাবে যেন এই অবাঙালিরা বসবাস করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দেব। জায়গা পেলেই ভবন নির্মাণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের কিছু লোক আছে, একটু জায়গা খালি পেলেই ভবন নির্মাণ করতে আসে। এই যে কালশী বালুর মাঠ; এটা বিনোদন পার্ক হবে। এখানে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার ব্যবস্থা হবে। শিশুদের জন্য পার্ক করা হবে। যুবকদের জন্য ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবস্থা থাকবে। প্রবীণদের জন্য হাঁটার ব্যবস্থাও রাখা হবে। তবে এই মাঠ যেন মাঠ থাকে।

সর্বশেষ খবর