শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

কী হবে তৃণমূল বিএনপির

শফিউল আলম দোলন

নিবন্ধন পাওয়ার পরপরই মারা গেলেন তৃণমূল বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। শুরুতেই চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল সংগঠনটি। হোঁচট খাওয়া দলটি কি তার সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে? নাকি মুখ থুবড়ে পড়বে? ক্ষমতাসীন জোট, নাকি বিরোধী জোট- কোন পথে যাবে সংগঠনটি? এসব প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক সচেতন মহলে। মূল কথা- এখন কী হবে নেতৃত্বশূন্য তৃণমূল বিএনপির? এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সংগঠনটির সিনিয়র নেতারা। শীর্ষ নেতা-বিয়োগের শোক কাটিয়ে    ওঠার পাশাপাশি শিগগিরই তারা নতুন করে হাল ধরবেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব মেজর (অব.) শেখ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রয়োজনে আমরা জনস্বার্থে আন্দোলন করব। কিন্তু কোনো দোষারোপের প্রেক্ষিতে একেবারে সরকারকে সরিয়ে দিতে হবে- এটা আমরা বিশ্বাস করি না। তাছাড়া সে রকম কোনো পরিস্থিতিও দেশে হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের সারা দেশেই কাজ করতে হবে। দলকে সুসংগঠিত করে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। হাতে গোনা কয়েকটি খাতের দুর্নীতি ছাড়া সব ক্ষেত্রেই দেশ উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো বড় বড় উন্নয়ন কাণ্ডগুলো আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাক- সেটা আমাদের কাম্য। কোনো ইস্যুতে জ্বালাও-পোড়াও ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড আমরা কিছুতেই মেনে নেব না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশে থাকবেই। কিন্তু সেটা যেন মানুষের নাগালের ভিতরে থাকে। সংগঠনটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মো. আক্কাস আলী খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী সপ্তাহেই আমাদের সর্বোচ্চ ফোরামের বৈঠক আহ্বান করা হবে। সে বৈঠকেই সংগঠনের চেয়ারম্যানের শূন্যস্থান পূরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করছি- আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সাহেবের বড় কন্যা অন্তরা সেলিমা হুদা অভিষিক্ত হতে পারেন।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত তৃণমূল বিএনপি। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে তৃণমূল বিএনপিকে নির্বাচনী প্রতীক ‘সোনালি আঁশ’ দিয়ে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছর বয়সে মারা যান ক্যান্সারে আক্রান্ত সাবেক এই বিএনপি নেতা এবং প্রাক্তন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এর মাত্র তিন দিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ইসির নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল তৃণমূল বিএনপি। সে আবেদন ইসি প্রত্যাখ্যান করায় আদালতে যান ব্যারিস্টার হুদা। গত ৯ ফেব্রুয়ারি তার পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ পাওয়ায় দলটি নিবন্ধন পায়। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যুক্ত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলের স্থায়ী কমিটিতেও যুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়াও তাকে একই পদে রেখেছিলেন। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। মাঝে একবার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে আবারও ফিরে আসেন। ২০১২ সালে বিএনপি ত্যাগ করে বিএনএফ নামে নতুন দল গঠন করেন। পরে বিএনপি থেকে আবারও বহিষ্কার হয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে তোলেন। এরপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে সফল না হয়ে সর্বশেষ গঠন করেন ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর