শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোডমার্চসহ নতুন কর্মসূচিতে বিএনপি

ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনের গতি বাড়ানোর লক্ষ্য

শফিউল আলম দোলন

রোডমার্চসহ নতুন কর্মসূচিতে বিএনপি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদের বিলুপ্তিসহ ১০ দফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। এ উপলক্ষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। পয়লা মে রাজধানীতে শ্রমিক সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। আবার বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি আলাদাভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানাতে পারেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পর্যায়ক্রমে রোডমার্চ, লংমার্চ, মানববন্ধন, অবস্থান, সমাবেশ, র‌্যালি, বিক্ষোভ মিছিল, সচিবালয় ঘেরাও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওসহ সম্ভাব্য সব ধরনের কর্মসূচিতে যেতে পারে দলটি। সমমনা অন্য দলগুলোও যুগপৎভাবে এসব কর্মসূচি পালন করবে। সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব কর্মসূচি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। কথা হয়েছে সমমনা দলের নেতাদের সঙ্গেও। ধারাবাহিক এ কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে এক দফা কর্মসূচিতেও চলে যেতে পারেন তারা। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া এখন দেশের সব গণতান্ত্রিক দল এবং সর্বস্তরের মানুষ চায় একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এজন্য দরকার বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের পতন। এ দাবিতে দেশব্যাপী গণ আন্দোলন চলছে। এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনে যা যা কর্মসূচি পালন করা দরকার, আমরা তার সবই করব। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবেই।’ জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় দলের আগামী দিনের করণীয় ও আন্দোলনের কর্মকৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। প্রথমে অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অথবা মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের গতি বাড়ানোর পর ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ, লংমার্চের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়েও মতামত ব্যক্ত করা হয়। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোও একই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। তারা বলেছে, যথেষ্ট হয়েছে, এ সরকারকে কোনো অজুহাতেই আর সময় দেওয়া যায় না। এমনকি পাবলিক পরীক্ষা কিংবা সিটি নির্বাচনের মতো অজুহাতেও নয়। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার এ আন্দোলনকে যে কোনো মূল্যে সামনে এগিয়ে নিতেই হবে। এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের জন্য শিগগিরই অভিন্ন দাবিতে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার বিষয়েও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। নতুন কর্মসূচির পাশাপাশি দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। এসব সিটিতে দলীয় পদে থেকে কেউ মেয়র পদে নির্বাচন করলে বহিষ্কার করার বিষয়ে কঠোর বার্তা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মেনে নেওয়া না হলে যা যা দরকার জনগণ তা-ই করবে। সরকার বিদায়ে যেসব কর্মসূচি দরকার এর সবই দেওয়া হবে। আন্দোলন চলছে, সামনে আরও বৃহৎ কর্মসূচি আসছে। আন্দোলন আরও বেগবান হবে। সরকারের আচরণের ওপরই নির্ভর করবে বিএনপির আন্দোলনের ধরন কী হবে। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তারপর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোন সরকার কখন বিদায় হবে সেটা নির্ধারিত নয়। তবে এটা নিশ্চিত যে, ফ্যাসিবাদের পতন অনিবার্য। এটা করবে দেশের জনগণ। গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ সরকারের বিদায় ঘটানো হবে।’ সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়কসহ বিভিন্ন দাবিতে গত বছর অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। সেখান থেকে সারা দেশে আশাতীত জনসমর্থন ও সাড়া পড়ে। বিভাগীয় এ কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বস্তরে দলীয় নেতা-কর্মীরা আরও সক্রিয় এবং উজ্জীবিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় দলটি। ২৪ ডিসেম্বর থেকে অভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম (একাংশ), বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যসহ আরও বেশ কটি দল মাঠে নামে। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে গেল রমজান মাসেও কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, চলমান আন্দোলন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এবার বিএনপির আর পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। ‘করো অথবা মরো’ নীতি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই ঈদুল আজহার আগেই লাগাতার কর্মসূচিতে যেতে চায় বিএনপি। থাকবে রোডমার্চ-লংমার্চসহ নানা সাড়াজাগানো কর্মসূচি। দেশের এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক বিভাগেও দেওয়া হতে পারে এ কর্মসূচি। এর মধ্যে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কোনো ফয়সালা না হলে অর্থাৎ বিরোধী দলের দাবি না মানলে চলমান কর্মসূচি যে কোনো সময় এক দফা দাবিতেও রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক নীতিনির্ধারক। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এ সরকারের পতন অনিবার্য। এ দাবি আদায়ে আন্দোলন চলছে। আর এর জন্য যেসব কর্মসূচি দেওয়া দরকার, বিএনপি তা-ই দেবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী প্রস্তুত।’ জানা যায়, পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ব্যানারে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ডাকা শ্রমিক সমাবেশ ও র‌্যালিতে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রোজার ঈদের পর এ কর্মসূচির মাধ্যমেই আন্দোলন আবারও শুরু করতে চায় বিএনপি। শ্রমিক সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। আবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেও সেটা করা হতে পারে। শ্রমিক সমাবেশ ও র‌্যালি সফল করতে কয়েক দিন ধরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ইতোমধ্যে মতবিনিময় সভা করেছেন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা। এসব সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী ও সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর