ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানসহ ১২ পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। উত্তরা পূর্ব থানায় বিক্ষোভকারীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিহত আরও ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে সোমবারের ঘটনায় উত্তরায় নিহতের সংখ্যা ২৩-এ দাঁড়াল। নিহতরা সবাই পুলিশ সদস্য কি না তা নিশ্চিত করা যায়নি। এ থানার সামনে থেকে ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানার সামনে তিন আসামির লাশ পড়ে ছিল। এদের মধ্যে একজনের পরনে হাতকড়া দেখা গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশসহ আরও ৬৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানার সামনে অন্তত ৭/৮টি পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পোড়া গাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্রও লুট করা হয়। তারা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা থানার ভিতরে ঢুকে পুলিশ সদস্যদের মারধর করে। তাদের কুপিয়ে হত্যা করে। পরে থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। থানা থেকে যে যা পারছে নিয়ে বের হয়ে গেছে। জানা গেছে, বিক্ষুব্ধ জনতা থানার ওসি আবুল হাসানসহ ১২ পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে। পাশাপাশি তিন আসামি পুড়ে মারা গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গুলিতে আহত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- ডিবির পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম (৪৪), পুলিশ সদস্য মনির হোসেন (৪৫), রাসেল মাহমুদ (২১), র্যাব-১০-এর কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন (৫৭), অজ্ঞাত (৪০), অজ্ঞাত (৩২), অজ্ঞাত (৩৮), আবদুল জব্বার (৩০), রোমান (১৭), সাইফুদ্দিন (৬০), সুলতান (৩০), পুলিশ সদস্য আবদুল আলিম শেখ (৪৬), পুলিশ সদস্য সঞ্জয় কুমার দাস (৩১), আশরাফুল (১৭), মো. রুবেল (১৮), অজ্ঞাত (৩০), অজ্ঞাত (২৮), অজ্ঞাত (৩০) এবং অজ্ঞাত (৪০)।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে চার লাশ : রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে চারটি অগ্নিদগ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। গতকাল সকালে ধানমন্ডি ৩২-এর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের পূর্ব দিকের ৩ নম্বর বাড়িতে লাশগুলোর সন্ধান মেলে। গত সোমবার বঙ্গবন্ধুর বাসভবন তথা স্মৃতি জাদুঘরসহ আশপাশের পাঁচটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এর চারটি বাড়িই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর আওয়ামী লীগের কাজে ব্যবহার হয়ে আসছিল। এ ছাড়া ৩২-এর সান্তুর রেস্টুরেন্টেও আগুন দেওয়া হয়েছে।
সাভারে পুলিশসহ নিহত ৩৪ : সাভারে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ কয়েক শতাধিক। তবে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিক্ষিপ্ত জনতা পুড়িয়ে দিয়েছে আশুলিয়া, ধামরাই ও সাভার মডেল থানা। আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি, অফিস ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চারদিকে এখন শুধু উদ্বেগ, আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এখনো বিভিন্ন হাসপাতাল ও রাস্তায় পড়ে আছে অজ্ঞাতনামা অনেকের লাশ। বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাভারের এনাম মেডিকেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৪, নারী ও শিশু হাসপাতালে ৩, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজে ৯ ও হাবিব ক্লিনিকে দুজনসহ মোট ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা সবাই গুলিতে নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আশুলিয়া থানার সামনে চারজন ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে আশুলিয়া থানার লাশ ঘরের সামনে দুজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ নিয়ে মোট ৩৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে এ সংখ্যা বাড়তে পারে।
নোয়াখালীতে তিন পুলিশসহ নিহত ৪ : নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিন পুলিশসহ চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত সবার পরিচয় পাওয়া যায়নি। গত সোমবার সংঘর্ষে তারা মারা যান।
কুমিল্লায় দুই পুলিশসহ নিহত ৩ : গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস থানা পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে দাউদকান্দির তুজারভাঙা গ্রামের বাসিন্দা বাবু মিয়া (২১) গুলিতে নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা তিতাস থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ গুলি করে। এতে কমপক্ষে ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন।
গাজীপুরে পুলিশসহ নিহত ২ : গাজীপুরে পুলিশ সদস্যসহ দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন থানার সামনে আবদুল মালেকনামে এক পুলিশ সদস্যের লাশ পাওয়া যায়। তিনি গাজীপুরের বাসন থানার কনস্টেবল ছিলেন। এদিকে কালিয়াকৈরে বিজয়ের আনন্দ মিছিলে বেরিয়ে মোস্তাফা মিয়া নামে এক শ্রমিক নিখোঁজের পরের দিন জঙ্গলে লাশ পাওয়া যায়। তার বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার মহিষবাতানে।
রাজশাহীতে বিএনপি কর্মীর মৃত্যু : রাজশাহীর মোহনপুরে বিএনপি কর্মী জয়নাল আবেদীনকে কুপিয়ে হত্যা ও ধুরইল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোকলেসুর রহমানসহ দশম শ্রেণির ছাত্র মনিরুলকে কুপিয়ে জখম করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
ঘটনাস্থলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।