জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা মেজরিটি-মাইনরিটি মানি না। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া সব ব্যক্তি এ দেশের গর্বিত নাগরিক। ভারত এটা নিয়ে ট্রাম্পকার্ড খেলছে। অথচ সারা দুনিয়া দেখছে কে সাম্প্রদায়িক। কে সংখ্যালঘু হত্যাকারী। আমাদের জীবন থাকতে এ দেশের একটি ধূলিকণাও কাউকে দখল করতে দেব না। কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে গতকাল আয়োজিত মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ ও ভারতকে ইঙ্গিত করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনারা কাদের ভয় দেখাচ্ছেন? যারা এক হাত হারানোর পরও, পঙ্গুত্ববরণ করার পরও যুদ্ধে প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিল, তাদের ভয় দেখাবেন না। শাহাদাত যাদের প্রিয় তাদের দিকে চোখ রাঙাবেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত জন শহীদ হয়েছেন, আল্লাহ তাদের কবুল করুক। যারা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাদের লাল গোলাপ শুভেচ্ছা জানাই। এ সময় তিনি লাল গোলাপ হাতে নিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল। দুটি কমিশন গঠন করা হলো কিন্তু আলোর মুখ দেখল না। কারণ সর্ষের মধ্যে ভূত ছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তাদের সহকর্মীদের হত্যার কারণ জানতে চায়। এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে জনগণের সামনে উন্মুক্ত করুন। তিনি বলেন, সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর দেশপ্রেমিক সুশৃঙ্খল বিডিআরকে বানানো হলো সীমান্তের চৌকিদার। আওয়ামী লীগ জনগণকে হত্যার মিশন নিয়ে নেমেছিল। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত হত্যাকান্ড করেছিল। আমরা প্রত্যেকটা ঘটনার বিচার চাই। বিচার না করলে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। জামায়াত আমির বলেন, সরকারকে বলব, কিছু মৌলিক সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন। তরুণ প্রজন্ম ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। তারাই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে দুনিয়ার জন্য অনুসরণীয় করে তলুন। যেন সারা পৃথিবীর মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিভিন্ন মহলে জামায়াতে ইসলামীকে বলা হয় প্রতিক্রিয়াশীল দল। অথচ আমাদের মতো নির্যাতিত আর কে হয়েছে? কোন দলের ১১ জন প্রধান নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে? তার পরও আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে চলেছি। শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে দুটি বিমান বন্দর বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কুমিল্লা বিমান বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক জেলার কেন্দ্রস্থল কুমিল্লা। তাই বর্তমান সরকারকে বলব, কুমিল্লা বিমান বন্দরের দিকে নজর দিন। শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, কুমিল্লাকে কুমিল্লা নামে বিভাগ দেবেন না। আপনি বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে শ্রদ্ধা করতে পারেননি। আপনি প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য ছিলেন না। বর্তমান সরকারকে বলব, নামের কারণে কুমিল্লাকে বিভাগ করা হয়নি। কুমিল্লাকে অপমান করা হয়েছে। অপমানিত কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করুন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. মো. আবদুল্লাহ তাহের বলেন, আমরা ৫ আগস্ট যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি, কারও ব্যর্থতায় সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরের আমির কাজী দীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আবদুর রব, সাবেক চাকসু ভিপি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, কুমিল্লা মহানগরীর নায়েবে আমির মু. মোছলেহ উদ্দিন ও এ কে এম এমদাদুল হক মামুন।