বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আদর্শ গন্তব্যস্থল উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার এবং ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ও চীন সরকার যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মাল্টিপারপাস হলে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে চীনের ১০০ কোম্পানির প্রায় ২৫০ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ এক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে, নীতিমালা সহজ করতে এবং ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ সরকারের ১০ মাসে আমরা সংস্কারের সুফল দেখতে পাচ্ছি। এপ্রিলে সফলভাবে বাংলাদেশ বিজনেস সামিট সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কোম্পানিগুলো পাঁচ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। সবচেয়ে বড় প্রতিনিধিদল এসেছিল চীন থেকে। সামিট চলাকালে একটি শীর্ষ চীনা টেক্সটাইল কোম্পানি কেবল স্পিনিং খাতে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।’
বাংলাদেশে বিদ্যমান বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে চীনা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘টেক্সটাইল ও পোশাকশিল্প থেকে শুরু করে ওষুধ, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, পাট, মৎস্য, তথ্যপ্রযুক্তি-প্রতিটি খাতেই বিনিয়োগ ও অংশীদারির উপযোগী সুযোগ রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করুন।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে একটি কৌশলগত অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমাদের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরই বয়স ২৬-এর নিচে। এ কর্মক্ষম জনশক্তি বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আদর্শ গন্তব্যে পরিণত করেছে। তবু বছরের পর বছর ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বৈরশাসন সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। লাখ লাখ তরুণের নেতৃত্বে সংঘটিত জুলাই বিপ্লব সেই অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়েছে।’
বাংলাদেশের পাট গবেষণায় আগ্রহ চীনের : সফররত চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও বলেছেন, তার দেশ কৃষি, পাট, সামুদ্রিক মৎস্য ও গবেষণার ওপর বিশেষ নজর রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্যে সহযোগিতা বাড়াতে প্রস্তুত। গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাট খুবই উপযুক্ত পণ্য হতে পারে। বাংলাদেশের পাটের প্রশংসা করে তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশ থেকে বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পাট আমদানি করে, যা বাংলাদেশের পাট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ। গবেষণা ও পণ্য বৈচিত্র্যের মাধ্যমে এটি বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে চীনা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর চীনা পাট ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য নিয়ে কিছু গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একত্রিত হন। যদি বাংলাদেশ গবেষণা কাজে যোগ দেয়, তাহলে পাট আমাদের জন্য খুবই উপযুক্ত পণ্য হবে বলে মন্তব্য করেন ওয়েনতাও।
চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ভোগবাদের কথা উল্লেখ করে বলেন, রাত ১০টার পরও বাংলাদেশি মলে ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখে তিনি মুগ্ধ এবং এটা ইঙ্গিত দেয় যে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে। তিনি বলেন, এখানে সঙ্গে আসা চীনা কোম্পানিগুলো এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আরও আত্মবিশ্বাসী।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে, বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে, মৎস্য ক্ষেত্রে অনাবিষ্কৃত বিশাল সুযোগ রয়েছে। চীনা স্পর্শের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে একটি উৎপাদন ইউনিটে রূপান্তর করা যেতে পারে।
ওয়াং ওয়েনতাও বলেন, চীন গভীর জলের সামুদ্রিক মৎস্য চাষে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। মৎস্য ও সামুদ্রিক অর্থনীতিতে চীনা দক্ষতার কথা উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা চান।