২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থ উপদেষ্টার আন্তরিকতা প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে তাঁর বাস্তবধর্মী উপস্থাপনায় বোঝা যায় তিনি দেশের বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক সংকট সম্পর্কে সচেতন। মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান সংকট, বিনিয়োগ স্থবিরতা ও বৈষম্য- এই বড় চ্যালেঞ্জগুলো তিনি চিহ্নিত করেছেন এবং সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বাজেটের ভাষাগত দৃঢ়তা ও অঙ্গীকারের পেছনে কাঠামোগত দুর্বলতা স্পষ্ট। রাজস্ব আহরণ, ব্যয় দক্ষতা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা- পুরোনো সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বাজেটের কাঠামোও পূর্ববর্তী ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। যেখানে সংস্কারের দৃষ্টিভঙ্গি সীমিত। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা বাজেট বাস্তবায়নের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় সংস্কারের ঘাটতি। ২০২৪ সালের শিক্ষার্থী আন্দোলনে ওঠা বৈষম্য হ্রাস ও কর্মসংস্থানের দাবিগুলো আংশিক প্রতিফলিত হয়েছে। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ অপর্যাপ্ত এবং কাঠামোগত পরিবর্তন নেই। কার্যকর ফল পেতে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো অনুপস্থিত। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কিছু পরিকল্পনা থাকলেও, কর সংস্কার, আইনি অনিশ্চয়তা হ্রাস ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই, যা বেসরকারি খাতের আস্থা ফেরাতে অপর্যাপ্ত। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা বাজেট বাস্তবায়নের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় সংস্কারের ঘাটতি। বিশেষ করে মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয় ও ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেই। বাজেট তাই কার্যকর রূপান্তরের বদলে শুধুই সংখ্যার খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে- সরকার কি অর্থনৈতিক সংস্কারে মনোযোগ দেবে, নাকি রাজনৈতিক সংকটই অগ্রাধিকার পাবে? নির্বাচনি অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এখনই সময়, অর্থনীতি পুনর্গঠনের সাহসী পথে এগোনোর- না হলে বাজেট কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই থেকে যাবে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং (সানেম)