জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, বর্তমান সময়ের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সরকার চিহ্নিত করতে পারলেও তার সঠিক সমাধান বা কৌশল প্রণয়ন করতে পারেনি। বৈষম্যহীন সমাজের যে ভিশন সেটি এ বাজেটের মধ্যে আসেনি। নতুন বন্দোবস্ত, অর্থনৈতিক রূপান্তরের যে আকাঙ্ক্ষা সেটার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি। আগের অর্থনীতির অনেক ছাপ এ বাজেটে দেখা যাচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে এসব কথা জানান আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত ১৫/১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে রাজনৈতিক কাঠামোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতি তখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল। ব্যাংকগুলো ছিল দুর্দশাগ্রস্ত ও ঋণগ্রস্ত। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে বাংলাদেশ ছিল একটা লুটপাটের অর্থনীতির মধ্যে। সেখান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে, অর্থনীতির রূপান্তর ঘটবে। যে বৈষম্যহীন আর্থসামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এ গণ অভ্যুত্থান হয়েছে তা বাস্তবে রূপ দানের পলিসি ও ভিশন এ বাজেটের মধ্যে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম।
আমাদের মনে হয়েছে সরকার অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছে কিন্তু এগুলো সমাধানের জন্য সঠিক সমাধান বা কৌশল এ বাজেটের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়নি। এক বছরের জন্য এ বাজেট বাস্তবসম্মত হলেও নতুন বন্দোবস্ত বা অর্থনৈতিক রূপান্তরের যে আকাঙ্ক্ষা তার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, বাজেটে পুরোনো অর্থনৈতিক কাঠামোর আয় বৈষম্য কমানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখিনি। করদাতা সংখ্যা পূর্বে যা ছিল সেটিই বিদ্যমান রয়েছে। যে সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দেয় তাদের করের আওতায় আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ এই বাজেটে নেই। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ওপর করের যে চাপ ছিল সেটি অব্যাহত থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর কর কমানো হলেও এ চাপ কমবে না। তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের আন্দোলন থেকেই এ গণ অভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয়েছিল। তরুণদের ব্যাপক প্রত্যাশা ছিল যে, বেকার সমস্যার সমাধান হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ থাকবে। কিন্তু আমরা সেটি দেখতে পাইনি। উপরন্তু গত এক বছরে নতুন করে ২৬ লক্ষ বেকার বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর যে প্রয়োজন ছিল সেই ধরনের নীতি গ্রহণ করা হয়নি। বরং ব্যাংকের ওপর যে নির্ভরশীলতা সেটি অব্যাহত রয়েছে। ফলে এই বাজেট থেকে বেকার সমস্যার নিরসন হবে সেটি আমরা মনে করছি না।
এনসিপি প্রধান বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতেও তেমন নতুনত্ব নেই। শিক্ষা খাতে জিডিপির ন্যূনতম ২ শতাংশ বরাদ্দ থাকাটা উচিত বলে আমরা মনে করি। এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১.৭ শতাংশ। স্বাস্থ্য বা অন্যান্য খাতেও বরাদ্দ বাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি এই সরকারের নজর থাকবে। কারণ অর্থনীতির এই ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রবাসীকল্যাণ খাতে বাজেট কমানো হয়েছে। এই খাতে বাজেট অর্ধেক করা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।
নাহিদ বলেন, আমরা আরও প্রত্যাশা করেছিলাম যে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে এমন বাজেট প্রণয়ন করা হবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো উদ্যোগ বাজেটে আমরা দেখিনি। এদিকে ই-কমার্স খাতে ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৫ পার্সেন্ট থেকে ১৫ পার্সেন্ট করা হয়েছে। আমাদের ডিজিটাল ইকোনমিতে এ নীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা উচিত ছিল না। রেজিম চেঞ্জের পরে ইনসেনটিভ দিয়েও কালো টাকা সাদা করা সম্ভব হবে না। কালো টাকা সাদা করার সুযোগটা বন্ধ করা উচিত।
সবশেষে তিনি বলেন, জুলাই আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য যে ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে আমরা সেটিকে সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে এই টাকা যেন তাদের কাছে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি তা বাস্তবায়নে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়। তাদের পুনর্বাসনের জন্য অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ টাকার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন প্রমুখ।