বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাস সমসাময়িক প্রসঙ্গ

অধ্যাপক ডা. জগদীশ ঘোষ

করোনাভাইরাস সমসাময়িক প্রসঙ্গ
ধারণা করা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের বহিরাবরণের একটি প্রোটিন মিউটেশন হওয়ার কারণেই এ ভাইরাসটি মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা অর্জন করে। কভিড-১৯ একটি অত্যন্ত সংক্রমণপ্রবণ ব্যাধি

নভেল করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগটির নামকরণ করা হয়েছে কভিড-১৯। নভেল করোনাভাইরাসটি পূর্ববর্তী করোনা প্রজাতির সার্স এবং মার্স ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ধারণা করা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের বহিরাবরণের একটি প্রোটিন মিউটেশন হওয়ার কারণেই এ ভাইরাসটি মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা অর্জন করে। কভিড-১৯ একটি অত্যন্ত সংক্রমণপ্রবণ ব্যাধি। এ রোগের অনেক বিষয়ে এখনো গবেষণা চলছে এবং সমসাময়িক তথ্য রোগটির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় অত্যাবশ্যক। যে সব দেশ ও অঞ্চলের সমসাময়িক সময়ে এ রোগটির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা আছে তা কাজে লাগানো প্রয়োজন যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় EVIDENCE BASED MANAGEMENT বলা হয়। কভিড-১৯ এ আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর হালকা থেকে মাঝারি ধরনের, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি হয় যা সাধারণ চিকিৎসাতেই সেরে যায়। বৃদ্ধ/বয়স্ক ব্যক্তি এবং যে সব ব্যক্তি আগে থেকেই ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত, হৃৎপি-, ক্যান্সার অথবা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের শরীরে রোগটি তীব্র আকার ধারণ করে। কভিড-১৯ খুবই দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে ২৬ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। অতএব, এখনই এটির বিস্তার বন্ধ অথবা কমিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। রোগটির সংক্রমণ কমানো/বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ : ১. বারবার হাত ধোয়া। ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি অথবা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দ্বারা হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। সাবান পানি এবং অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার উভয়েই সমানভাবে কার্যকর। অতএব, হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি এর যে কোনোটি ব্যবহার করলেই চলবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার/ সাবান পানি ভাইরাসের কোষ আবরণ ভেঙে ফেলতে সক্ষম। ২. ব্যক্তিগত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। কভিড-১৯ সংক্রমণের ফলে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে রোগটির সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যক্তিগত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যাবশ্যক। সামাজিক সব পর্যায়ে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে তিন ফুট (এক মিটার) দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ৩. চোখ, মুখমন্ডল, নাক বারবার স্পর্শ করার অভ্যাস পরিহার করতে হবে।

৪. করমর্দন, কোলাকুলি ইত্যাদি শারীরিক সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। ৫. মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য : সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার অত্যাবশ্যক না। যদি কোনো ব্যক্তি হাঁচি বা কাশিতে আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করা আবশ্যক। মাস্ক ব্যবহারের পূর্ণ সুফল কেবল মাস্ক যখন বারবার হাত ধোয়ার সঙ্গে যুক্তভাবে করা হয় তখনই পাওয়া যায়। মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই এর ব্যবহারবিধি অনুসরণ করতে হবে। ক. মাস্ক পরার আগে হাত সাবান পানি/হ্যান্ডরাব দ্বারা ভালোভাবে পরিষ্কার করবেন। খ. মাস্ক দ্বারা মুখ ও নাক এমনভাবে ঢাকতে হবে যেন মুখমন্ডল ও মাস্কের মধ্যে কোনো ফাঁকা না থাকে।

গ. মাস্ক পরিহিত থাকাকালীন মাস্কটিতে হাত লাগাবেন না। ঘ. মাস্ক ব্যবহারের পর পিছনের অংশ ধরে খুলতে হবে, সামনের দিক স্পর্শ করা যাবে না এবং ব্যবহার শেষে বন্ধ ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। খুলে ফেলার পর পুনরায় হাত সাবান পানি/ হ্যান্ডরাব দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। ঙ. ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী। যারা কভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত তাদের অবশ্যই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। তাই এ বিষয়ে অবহেলা না করে  যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।

লেখক : সাবেক প্রধান, সংক্রামক ব্যাধি

হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর