বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সংকটে চাঙা চামড়াপণ্যের রপ্তানি

শাহেদ আলী ইরশাদ

সংকটে চাঙা চামড়াপণ্যের রপ্তানি

রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের পরেই অবস্থান করছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। পরিমাণে বেশি না হলেও ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে চামড়া পণ্যের রপ্তানির বাজার। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ (জুলাই-নভেম্বর) মাসে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয় ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাই-নভেম্বর মাসে রপ্তানিকারকরা চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৫৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার আয় করেছেন। যদিও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ কোটি ডলার। সে হিসাবে বলা যায়, রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা প্রথম পাঁচ মাসেই অর্জন হয়েছে। কারণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মাত্র ১ কোটি ডলার কম আয় হয়েছে প্রথম পাঁচ মাসেই।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। চামড়ার জুতা রপ্তানি করে পাঁচ মাসে ৩২ কোটি ৮১ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা বছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।

২০২১-২২ অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয় এসেছে ১৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। যা ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। তবে ওই অর্থবছরে চামড়া রপ্তানি ১ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার ছিল।

২০২০ সালে এবং আংশিকভাবে ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ায় চামড়াখাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে রপ্তানির আগের ধারায় ফিরে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতকে।

ইপিবি বলছে, গত জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকা রপ্তানি ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৫ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আমদানিকারকরা পণ্য উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলোর ওপর নির্ভরতা কমানোর কারণে আমাদের দেশে অনেক বেশি ক্রয়াদেশ এসেছে।

জুতা রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, শীত ও বড় দিনের আগে চাহিদা বেশি থাকায় চামড়াজাত পণ্য ও চামড়ার জুতা রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি জুলাই-নভেম্বর মাসেও ভালো হয়েছে। বর্তমান রপ্তানির প্রবণতা আর্থিক বছরের বাকি সময়ে অব্যাহত থাকবে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারকরা। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট সহসাই কমার কোনো লক্ষণ দেখছেন না তারা। চামড়াজাত পণ্যের উদ্যোক্তারা বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা ব্যবহারে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সেগুলো সমাধান করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং শুল্ক বিভাগের সহযোগিতা চান তারা। তারা বলেন, যদি আমরা সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাই, রপ্তানি করে আরও অনেক বেশি    আয় করা সম্ভব। কারণ চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনাময় রয়েছে।

হিসাব বলছে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী চামড়াজাত পণের বাজার ছিল ২৪ হাজার কোটি ডলারের। এটা ২০২৭ সাল নাগাদ ৩১ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে। যদিও বিশ্ববাজারের এই ব্যবসায় বাংলাদেশের অংশ ১ শতাংশেরও কম। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য মিলে চলতি অর্থবছরের এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৪ কোটি ডলার। ২০২৯-৩০ সালে রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

জুতা প্রস্তুতকারকদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট সত্ত্বেও চামড়াজাত পণ্যের চালান গতি পাচ্ছে। চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিজাইন বাই রুবিনার কর্ণধার রুবিনা আক্তার মুন্নি বলেন, বাংলাদেশে চামড়ার উচ্চ গুণমান এবং উন্নত ডিজাইন বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। এটি চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিকে বেগবান করেছে। উদ্যোক্তার মতে, স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল পাওয়া যায় বলে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা তুলনামূলক কম দামে পণ্য দিতে পারে। মুন্নি বলেন, আমি জাপান এবং পোল্যান্ড থেকে রপ্তানি আদেশ পেয়েছি। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারটি যদি লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) কাছ থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়, তাহলে রপ্তানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এদিকে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার আইসিসিবি এক্সপো জোনে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। চলবে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিশ্বের ১০টি দেশের ২০০টি প্রতিষ্ঠান এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উন্মুক্ত রয়েছে এই প্রদর্শনী। চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, যারা কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, উপকরণ প্রদর্শন করছেন তারা আমাদের বাজারটা দেখবেন, পটেনশিয়ালটা বুঝবেন। ভালো উদ্যোক্তার সংস্পর্শে আসবেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারবেন। তারা হয়তো ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। এ ধরনের অনেক উদাহরণ আমরা দেখেছি।

সর্বশেষ খবর