বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

খুলনায় পোলট্রি শিল্পে অশনি সংকেত

পুঁজি সংকটে ব্যাংক থেকেও ঋণ পাচ্ছেন না খামারিরা। ফলে বিভিন্ন সমিতি, এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে খামার করছেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনায় পোলট্রি শিল্পে অশনি সংকেত

খামারে উৎপাদিত ডিম ও মুরগির দাম কম কিন্তু সেই তুলনায় খাবার, ভ্যাকসিন ও ওষুধের দাম অনেক বেশি। উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ বাড়লেও মুরগির দাম কমে যাওয়ায় লাভ মিলছে না। ফলে লোকসানে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন খুলনার বিভিন্ন উপজেলার খামারিরা। অনেকেই ডিমপাড়া মুরগি কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছেন।

জানা যায়, আমদানি কমে যাওয়ায় ভুট্টা, সয়াবিন খইলসহ বিভিন্ন খাবারের দাম বেড়েছে। আগে প্রতি কেজি ভুট্টা ২৮ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪১ টাকায়। সয়াবিন ও খইল ৫২ টাকার বদলে সংকটে তা বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা।  

খুলনার বটিয়াঘাটার খামারি শহিদুল ইসলাম জানান, সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে চার/পাঁচ মাস আগে খামারে ১০০ পিস মুরগি তুলেছিলাম। কিন্তু মুরগির খাবার, ভ্যাকসিন ওষুধে যে পরিমাণ ব্যয় হয় তা ডিম বিক্রি করে পাওয়া যায় না। নিজেরা পরিশ্রম করি, শ্রমিক খরচ লাগে না। তার পরেও মূলধন তুলতে হিমশিম খেতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে কেজি দরে ডিমপাড়া মুরগি বিক্রি করে দিয়েছি। খামারিরা জানান, মাঝে প্রতিটি ডিম ১২-১৩ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন দাম কমে সাড়ে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ১৮০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। আর সোনালি মুরগি কিছুদিন আগে ২৫০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা নেমেছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। ডুমুরিয়ার খামারি হায়দার আলীর খামারে সাড়ে ৩ হাজার ব্রয়লার মুরগি ছিল। হঠাৎ মুরগির দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন তিনি। এক চালানে কিছুটা লাভ হলে অন্য চালানে লোকসান হয়।

একইভাবে খুলনার রূপসা, কয়রা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও দিঘলিয়ার কয়েক শ খামারি পুঁজি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, খুলনায় তালিকাভুক্ত লেয়ার খামার রয়েছে ৯৮৭টি ও ব্রয়লার খামার রয়েছে ১৯২৭টি। নিবন্ধনকৃত রয়েছে ৩৭টি লেয়ার ও ৪০টি ব্রয়লার খামার। ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত চার শতাধিক মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে। তবে তালিকাভুক্ত খামারির বাইরেও বহু খামারি ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা যায়।

এদিকে পুঁজি সংকটে ব্যাংক থেকেও ঋণ পাচ্ছেন না খামারিরা। ফলে বিভিন্ন সমিতি, এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে খামার করছেন তারা।

খুলনা পোলট্রি ফিস ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, পোলট্রি খামারিরা এখন মহাসংকটে রয়েছেন। প্রতি কেজি ব্রয়লার উৎপাদন খরচ ১৩০ টাকা হলেও মাঝেমধ্যেই তা পাইকারি ১১৮-১২০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার ওপরে হলেও পাইকারি সাড়ে ৮ টাকা দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়বেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ।

 

 

সর্বশেষ খবর