বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বন্ধ ৫ হাজার খামার

♦ বন্ধ হয়ে গেছে ৩০ শতাংশ খামার ♦ বন্ধের পথে আরও ৫০ শতাংশ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ভালো নেই চট্টগ্রামের ডেইরি খামারিরা। গরুর খাদ্য, ওষুধ ও টিকার অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি এবং নানান স্থবিরতায় চরম সংকটে পড়েছেন খামারিরা। ফলে চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেছে ৫ হাজারের অধিক ডেইরি খামার। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বন্ধ হওয়ার পথে আরও ৫ হাজার খামার। তাই ডেইরি খামার রক্ষায় সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন খামারিরা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.  মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘খাদ্য এবং ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণে ছোট খামারি কিছুটা সমস্যায় আছেন। তবে ছোট খামারিদের তুলনায় বড় বড় খামারিরা ভালোই আছেন। আমরা চেষ্টা করছি ছোট খামারিদের সহায়তা দিয়ে সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় ছোট বড় ডেইরি খামার ছিল ১৮ হাজার ৩১২টি। যার মধ্যে নিবন্ধন রয়েছে দেড় হাজারের কিছু বেশি খামারের। এসব খামারে দৈনিক দুধ উৎপাদিত হতো ১২ লাখ লিটার চাহিদার বিপরীতে গড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১০ লাখ লিটার। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, গত দুই বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রামে ডেইরি খামারের সংখ্যা কমেছে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ। সেই হিসাবে ডেইরি খামারের সংখ্যা কমেছে ৫ হাজারের বেশি। উৎপাদনও কমেছে কয়েক লাখ লিটারের ওপরে। সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে আরও ৫ হাজার খামার।

চিটাগং ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মালিক মোহাম্মদ ওমর বাবু বলেন, ‘গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩০ শতাংশ খামার। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে আরও ৫০ শতাংশ। এ ধারা চলতে থাকলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে ডেইরি শিল্পে।’ তিনি বলেন, ‘খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেলেও দুধের দাম বাড়েনি। তাই খরচের সঙ্গে আয় মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে খামারিদের। এ সংকট মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ জরুরি।’

জানা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম ঢেউ থেকে চট্টগ্রামের ডেইরি খামারিদের ওপর শুরু হয় শনির দশা। ওই সময় থেকে হু হু করে বাড়তে থাকে গোখাদ্য, ওষুধসহ ডেইরি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দাম। রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এসব পণ্যের দাম বেড়ে হয়ে যায় দ্বিগুণের বেশি। এ ছাড়া পশুর ওষুধের দাম ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে। দুই বছর আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ১ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার মতো। একইভাবে ৮০০ টাকার রাইস পলিসের বস্তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ হাজার টাকা।

৪৫ টাকা কেজির সয়াবিন খইল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বস্তা প্রতি বেড়েছে (৫০ কেজি) ২৫০-৩০০ টাকা। এর মধ্যে পাতা ভুসি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮২০ টাকায় (৩৫ কেজি), চিকন ভুসি ২ হাজার ৪৫০ টাকায় (৫৫ কেজি), মোটা কুঁড়া ৬৫০ টাকায় (বগুড়া ৪০ কেজি), মোটা কুঁড়া (আশুগঞ্জ) ৬০০ টাকায়, ছোলার ভুসি ১ হাজার ২৯০ টাকায় (২৫ কেজি), লাল মটর ১ হাজার ২০ টাকায় (২০ কেজি), সাদা মটর ৯০০ টাকায় (১৫ কেজি), মুগডালের ভুসি ১ হাজার ২৮০ টাকায় (৪০ কেজি), চিঁড়ার ভুসি ৯৪০ টাকায় (৪৫ কেজি)। সাদা গম ২ হাজার ৬০০ টাকায় (৪৮ কেজি), লাল গম ২ হাজার ৫৭০ টাকায় (৪৮ কেজি), ভাঙা ভুট্টা ২ হাজার টাকা (৪৮ কেজি), সয়াবিন ৩ হাজার ১৭৫ টাকা (৫০ কেজি), সিদ্ধ খুদ ১ হাজার ৮৫০ টাকা (৫০ কেজি), আতপ খুদ ১ হাজার ৭৫০ টাকায় (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর