টানা কয়েক ঘণ্টার নাটকের পর শেষমেশ সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে ছিনতাইকারী সেইফ এলদিন মুস্তফা আত্মসমপর্ণ করেছেন। একইসঙ্গে বিমানের সব ক্রু ও যাত্রীদের মুক্ত করা হয়েছে। সাইপ্রাস পুলিশ দাবি, মুস্তফা আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরেনারি মেডিসিনের অধ্যাপক।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ছিনতাই হওয়া মিশরীয় বিমানটিকে নিয়ে সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে মঙ্গলবার দিনভর নাটক চলছিল। কী হয় কী হয়, এই উত্তেজনায় কাঁপছিল গোটা বিমানবন্দর। বিমান-যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনের চোখে-মুখে উদ্বেগের ছাপ ছিল স্পষ্ট। যাঁরা সদ্য মুক্তি পেয়েছেন, সেই যাত্রী আর তাঁদের পরিজনরা তখনও যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না, আপাতত তাঁদের ফাঁড়া কেটে গেছে। আর যাঁরা তখনও বিমানে আটক রয়েছেন সেই যাত্রী আর তাঁদের পরিজনদের অবস্থাটা কেমন, তা বলাই বাহুল্য!
বাকি যাত্রী ও বিমানকর্মীদের ছেড়ে দিলেও, চার জন ক্রু এবং ৪ জন বিদেশি যাত্রীকে দীর্ঘক্ষণ বিমানটিতে আটকে রাখেন ছিনতাইকারী। সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে নামার পর বিমানটির ধারে-কাছেই ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি সাইপ্রাসের পুলিশ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষীরা। ছিনতাইকারী মুস্তফা হুমকি দেন, তাঁরা ধারে-কাছে এলেই বোমা বা বিস্ফোরক দিয়ে বিমানটি উড়িয়ে দেওয়া হবে।
সাইপ্রাসের পুলিশ সূত্রে খবর, মুস্তফা খুব সাধারণ কেউ নন। তিনি আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরেনারি মেডিসিনের অধ্যাপক। সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বহু দিন দেখা-শোনা, কথাবার্তা নেই। কিন্তু সাবেক স্ত্রীকে দেখার খুব ইচ্ছে তাঁর। তিনি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। সেই দেখা যাতে মেলে, সে জন্য কিছু দিন আগে সাইপ্রাসে আশ্রয় চেয়েছিলেন তিনি। তা না পেয়েই নাকি সাইপ্রাস সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিমান ছিনতাই করেছেন ভেটেরেনারি মেডিসিনের অ্ধ্যাপক। আজ লারনাকা বিমানবন্দরে দাঁড়ানো মিশরীয় এয়ারলাইন্সের বিমানের ককপিট থেকেই আরবি ভাষায় লেখা একটি চিঠি ছুঁড়ে দিয়েছেন ছিনতাইকারী। সেই চিঠিটি তাঁর সাবেক স্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা। প্রেমের চিঠি। বিরহ-বেদনারও!
আলেকজান্দ্রিয়া থেকে কায়রো যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ছিনতাই করা হয় মিশরের সরকারি বিমান সংস্থা ‘ইজিপ্টএয়ার’-এর ওই বিমানটিকে। পাইলটকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছিনতাই করা বিমানটিকে তড়িঘড়ি নামতে বাধ্য করা হয় সাইপ্রাসে। ‘ইজিপ্টএয়ার’-এর ওই এমএস-১৮১ এয়ারবাসটিতে সব মিলিয়ে ছিলেন ৮১ জন যাত্রী। বিমানবন্দরে নামার পর পরই দোভাষীর মাধ্যমে সাইপ্রাসের সরকারি কর্মকর্তা ও বিমানবন্দরের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করে দেন ছিনতাইকারী। এরই প্রেক্ষিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক বিমানকর্মী আর ৪ জন বিদেশি যাত্রী ছাড়া বিমানের বাকি যাত্রীদের মুক্তি দেন ছিনতাইকারী।
লারনাকা বিমানবন্দরে নামার পরেই সাইপ্রাসের বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এক পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই বিমানে শক্তিশালী বোমা বা খুব জোরালো বিস্ফোরক রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ছিনতাইকারী বিমানটিকে তড়িঘড়ি সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে নামতে বাধ্য করেছে। ওই বিমানে একাধিক ছিনতাইকারী রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরে অবশ্য জানা যায়, মুস্তাফাই ওই বিমানের একমাত্র ছিনতাইকারী।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ মার্চ, ২০১৬/মাহবুব