এক আমেরিকান পর্যটক যৌন হামলাকারীর হাত থেকে পালাতে গিয়ে পর্বত থেকে পড়ে নিজের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলেছেন। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের কারাবির রেইলি সমুদ্র সৈকতে এই ঘটনা ঘটেছে।
নির্যাতিতার নাম হান্নাহ গ্যাভিওস (ছদ্মনাম)। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাসিন্দা। আপাই রেইঙওরচাই (২৮) নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা হান্নাহকে তার হোটেলে ফিরে যেতে পথপ্রদর্শণের ভান করে তার কাছাকাছি আসেন এবং তার ওপর যৌন হামলা চালান। এসময় হান্নাহ পালানোর চেষ্টা করতে গেলে পর্বতের গা থেকে পড়ে যান।
২৩ বছর বয়সী ওই মার্কিন নারীকে এখন থাইল্যান্ডের ফুকেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডাক্তাররা বলেছেন, তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে তিনি মারাত্মকভাবে যখম হয়েছেন।
গ্যাভিওস বলেন, তিনি মাত্র একদিন হলো থাইল্যান্ডে এসেছেন। এর মধ্যেই তিনি রাইলে সমুদ্র সৈকতে নিখোঁজ হন।
মিস গ্যাভিওস মেইল অনলাইনকে বলেন, ''রাত প্রায় ১১টা বেজে গিয়েছিল এবং চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এসেছিল। ফলে পর্বতের গা বেয়েই আমার হোটেলে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। আমি একটি পর্যটন দোকানে যাই এবং আমাকে হোটেলে ফিরে যেতে পথপ্রদর্শনের জন্য সহায়তা চাই। সেখানে থাকা লোকেরা আমাকে বলে যে রাতে একা একা যাওয়াটা বিপজ্জনক হতে পারে। সুতরাং তারা আমাকে তাদের একজন শ্রমিককে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে বলে।''
''লোকটিকে দেখে আমার খুব একটা ভালো লাগেনি। কিন্তু আমি খুবই ক্লান্ত ছিলাম এবং ঘরে ফিরতে উদগ্রীব ছিলাম। আমি প্রায় ১৬ ঘন্টা ধরে ভ্রমণ করছিলাম। ফলে আমার প্রায় বেহুঁশ হওয়ার মতো দশা ছিল।''
কিন্তু রেইঙওরচাই নামের ওই পথপ্রদর্শক হান্নাহকে তার হোটেলের পথে না নিয়ে বরং জঙ্গলে পাথুরে পর্বতের দিকে নিয়ে যায়। এরপর অন্ধকারে তার ওপর হামলা চালায়।
হান্নাহ জানান, তিনিও পাল্টা হামলা করে বাঁচার জন্য লড়াই করেন। এমনকি তিনি হামলাকারীর একটি কানে কামড় দিয়ে তা অর্ধেক ছিঁড়ে ফেলেন। এরপর তিনি জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে পর্বতের কিনার থেকে নিচে পড়ে যান।
হান্নাহ বলেন, আমি ভাবছিলাম আর বাঁচবো না। পালানোর চেষ্টাকালে পাহাড়ের গায়ে কয়েকবার আমার মাথা ঠুকে যায়। এরপর আচমকা নিচে পড়ে যাই। আমি যন্ত্রণায় আর্তচিৎকার করছিলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা ছিল এটি।
নিজেকে আমার পুরোপুরি থেতলানো সবজির মতো মনে হচ্ছিল। আমি পুরোপুরি অসহায় বোধ করছিলাম। আমি শরীরের একটি অঙ্গও নাড়াতে পারছিলাম না।
হান্নার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে এবং দেহের নিচের অর্ধেক অংশ সাময়িকভাবে অবশ হয়ে গেছে। ওদিকে হামলাকারী রেইঙওরচাই তাকে ওই অবস্থায় দেখেও তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালান।
এভাবে নির্যাতনের পর রেইঙওরচাই তাকে সেখানে ফেলে চলে যায়। সারা রাত ধরে সেখানেই পড়ে ছিলেন হান্নাহ। পরে সকাল বেলায় স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
ওদিকে, হামলাকারী রেইঙওরচাইকে গ্রেফতার করেছে থাই পুলিশ। আদালতে তার কঠোর শাস্তি হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। কারণ হামলার সময় তিনি পুরোপুরি স্বাভাবিক মস্তিষ্কে ছিলেন। সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ