হংকং-এর যৌনকর্মীদের মধ্যে খুন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ আতঙ্ক ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে। সম্প্রতি একটি খুনের মামলার রায় ঘোষণার পর সেই আতঙ্ক ফের নতুন করে সামনে এসেছে। ওইসময় দুই যৌনকর্মীকে নিজ ফ্লাটে নিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে এক মাদকাসক্ত খদ্দের।
এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের নজির নেই বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক বিচারক। ইন্দোনেশিয়ায় দুই নারীকে সেদিন নৃশংসভাবে হত্যা করে এক ব্রিটিশ ব্যাংকার। সেই অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রুরুক জুটিং নামে ওই ৩১ বছর বয়সী সাবেক ব্যাংকার অবশ্য সুমারথি নিংসি এবং সেনেং মুজিয়াসিকে হত্যার কথা অস্বীকার করেছেন। ২০১৪ সালের ওই ঘটনায় নিজেকে মাদকাসক্ত বলে দাবি করেছেন তিনি। তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটির ভিডিও থাকায় বিচারকদের জন্য রায় দিতে সহজ হয়। ব্রিটেনেই সাজা ভোগ করতে হবে তাকে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা জুটিং এক ধরনের যৌন বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি বলে রায় দেয় আদালত। বলেন, সে এমন বিভৎস কাজ করেছে যেটাকে ভাষায় বর্ণনা করার মত শব্দ আমার জানা নেই।
২০১৪ সালের নভেম্বরে যখন ওই দুই যুবতীকে হত্যা করা হয়, তখন নিরাপদ শহর হিসেবে পরিচিত হংকং স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। জুটিং-এর বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টটি ছিল যৌনপল্লীর খুব কাছে। ওই দুই নারীর একজনকে একটি বার থেকে এবং একজনকে ‘স্ট্রিপ ক্লাব' থেকে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে গিয়েছিল সে। হংকং-এ অনেক নারী ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন্স থেকে এসে এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। জুটিং-এর এই শাস্তিতে হংকং-এর যৌনপল্লীতে স্বস্তি নেমে এলেও, অনেক যৌন কর্মী বলছেন, হংকং-এর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় এমন ব্যক্তিদের বাধ্য হয়ে প্রশ্রয় দেয় তারা। এমনই একজন নারী সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, ওই দুই নারীর একজনের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। তাই তার এই মৃত্যু তাকে আতঙ্কিত করেছে, কিন্তু ১৩ বছর বয়সি সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে তিনি এ ধরনের কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে মাদকাসক্ত খদ্দের দেখলে এখন তিনি ভয় পান। এই রেড লাইট এশিয়ার বেশিরভাগ নারীকে হোটেলে গিয়ে কাস্টমারদের সঙ্গে রাত কাটাতে হয়। তাই এই নারী চান হোটেলে যাওয়ার আগে ওই ব্যক্তির সম্পর্কে কিছু আগাম তথ্য যেন পান সেই ব্যবস্থা করতে। এক রাতের জন্য সর্বোচ্চ ১৯৩ ডলার আয় হয় তার।
যে নারীদের হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে নিংসির পরিবার খুব গরিব। ইন্দোনেশিয়ায় তার একটি ছেলে রয়েছে। জুটিং-এর সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল অনলাইনে। ওই হত্যাকাণ্ডের পর নিংসির বাবা-মা এএফপিকে জানান, তারা জানতো তাদের মেয়ে এক রেস্তোরাঁয় কাজ করে। প্রতিমাসে পরিবারকে ২৫০ ডলার পাঠাতো নিংসি।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ