ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ক্ষোভের মাত্রা। ট্রাম্পকে কোনভাবেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানতে চাচ্ছেন না বিক্ষোভকারীরা। তার স্পষ্ট প্রকাশ ঘটছে গগনবিদারি স্লোগানে। ‘আন এ্যাকসেপ্টেবল’, ‘লাভ ট্রাম্পস হেইট’, ‘ড্রাম ট্রাম্প’, ‘ব্ল্যাক লাইভ মেটার’, ‘পপুলার ভোট’, ‘আমেরিকা ওয়াজ নেভার গ্রেট’, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প গো এওয়ে’, ‘র্যাসিস্ট-সেক্সিস্ট-এন্টি-গে’, ‘নো ফ্যাসিস্ট ইউএসএ’ ইত্যাদি স্লোগান ধ্বনিত হচ্ছে নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডা হয়ে ক্যালিফোর্নিয়া-ওরেগণ পর্যন্ত বিভিন্ন সিটিতে।
১২ নভেম্বর শনিবার রাত অর্থাৎ ভোটের পর চতুর্থ দিনেও তুমুল বিক্ষোভ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। বিক্ষোভকারীরা এখন ট্রাম্পকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন। অর্থাৎ অভিবাসন, মুসলমান, ল্যাটিনো ও নারী সম্পর্কে ইতিপূর্বে যেসব মন্তব্য/বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রত্যাহার করলেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
অন্যথায় বিক্ষোভের তীব্রতা আরও বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠি কর্তৃক এর আগেও ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে। তবে এবারের মত তা লাগাতার ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবলম্বনে এবারের বিক্ষোভের মাত্রা বেড়েই চলেছে। শুধু তাই নয়, ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর ‘মিলিয়ন মহিলা’র সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি সংস্থার প্রধান বব ব্যান্ড ফেসবুকে ‘উইমেন্স মার্চ অন ওয়াশিংটন’ কর্মসূচি ঘোষণার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩৫ হাজার মহিলা সাড়া দেন এবং সারা আমেরিকা থেকে নারীদের জড়ো করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। নারী সম্পর্কে অশালীন কথা বলার ঔদ্ধত্ব প্রদর্শনকারি কোন মানুষের অধিকার নেই হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত হবার-এমন মতামত ব্যক্ত করা হচ্ছে এই কর্মসূচির সমর্থকদের পক্ষ থেকে।
শনিবার নিউইয়র্ক সিটির ওয়াশিংটন স্কোয়ার পার্ক থেকে বেশ কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবন ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। শত শত পুলিশ ঘিরে রেখেছে ট্রাম্প টাওয়ার।
ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগণ, ওয়াশিংটন, ফ্লোরিডাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে প্রচন্ড বিক্ষোভের কারণে। লস এঞ্জেলেস সিটির ম্যাকআর্থার পার্কে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ সম্পর্কে সিটি মেয়র এরিক গার্সেটি বলেন, ‘আমার সিটি নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। এই সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়েও আমি অহংকার বোধ করি। তারা সকলেই নিজেদের অধিকার ও মর্যাদার সাথে দেশাত্মবোধের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটাতে দ্বিধা করেনি।’
মেয়র আরও উল্লেখ করেন, ‘যদিও মিডিয়ায় সে বিষয়ই গুরুত্ব পায় যে, কয়েকজন বিক্ষোভকারী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে কিংবা পথচারিদের বিব্রত করছে।’ ‘এটি ভুলে গেলে চলবে না যে, যারা আইনের অবজ্ঞা করে, তাদের দমনে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হয় না। তবে যারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করে, তাদের বাধা দেয়ার কোন এখতিয়ার কারো নেই’-বলেন মেয়র।
এদিকে, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র (ডেমক্র্যাট) বিল ডি ব্লাসিয়ো গত শুক্রবার মুসলিম-আমেরিকানদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। মেয়র তাদেরকে অভয় দিয়েছেন, ‘ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন বিরোধী কিংবা মুসলিম ধর্ম বিরোধী কোন প্রক্রিয়ারই আওতায় থাকবে না এই সিটি। এখানে সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-জাতিগোষ্ঠির মানুষ আগের মতই অবাধে বসবাস করবেন। একইসাথে ইমিগ্রেশনের স্ট্যাটাস নিয়েও কোন কথা বলা হবে না। সিটি মেয়র হিসেবে এই সিটির নাগরিকের সকল অধিকার সুরক্ষায় আমি বদ্ধ পরিকর’।
এদিকে, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্ণর (ডেমক্র্যাট) এন্ডু ক্যুমো নিউইয়র্কের ডেইলি নিউজ পত্রিকায় ১২ নভেম্বর এক বিশেষ নিবন্ধে লিখেছেন, ‘আমার পিতা ম্যারিয়ো ক্যুমো সারাটি জীবন লড়েছেন মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে। মৃত্যুদন্ডের বিধি বাতিলের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশের জন্যে বাবাকে এ রাজ্যের গভর্ণরশিপও ছাড়তে হয়েছে। এরপরেও তিনি সে দাবি থেকে সরে দাঁড়ান নি। কারণ তিনি জানতেন যে, দাবিটি ন্যায্য। ঠিক একইভাবে, সেই পিতার সন্তান হিসেবে আমিও মুসলমান, অভিবাসী, এলজিবিটি কম্যুনিটি তথা সকল আমেরিকানের ন্যায্য অধিকারের প্রশ্নে কখনোই ছাড় দেব না। দায়িত্ব পালনের শেষ সময় পর্যন্ত নাগরিকের অধিকার সুরক্ষায় আমি সোচ্চার থাকবো।’
অপরদিকে ২১ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে লিংকন মেমরিয়াল পার্কে ‘মিলিয়ন উইমেন’র সমাবেশ ঘোষণাকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদত্ত বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে। পরস্পরের সহযোগী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের পরিপূরক কাজে উদ্বুদ্ধ থাকতে হবে সামনের চারটি বছর। এ সময়ে আরও বেশী নারীকে নেতৃত্বে আনতে হবে। রাজনীতির সাথে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে নারীদের। নারীর অধিকার কিংবা মানবাধিকার সুরক্ষায় আমরা কাজ করে যাবো।’
বিডি প্রতিদিন/১৩ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল-০৫