পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত-চীনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব চলছিলই।সম্প্রতি ডোকা লা ঘিরে সিকিম সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি স্থাপনের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। খুব শিগগির সীমান্ত সমস্যা মিটবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু শান্তি স্থাপনের সব চেষ্টায় জল ঢেলে দিল যুক্তরাষ্ট্র।
চীনকে নিশানা করে ভারত পরমাণু অস্ত্র প্রস্তুত করছে বলে মন্তব্য করেছেন সে দেশের দুই পরমাণু বিশেষজ্ঞ। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করেনি বলে, দীর্ঘদিন ধরে পরমাণু সরবরাহ গোষ্ঠীতে ভারতের অন্তর্ভুক্তি আটকে রেখেছে বেইজিং। বারাক ওবামা সরকার এ নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিল বটে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে তা একচুলও এগোয়নি। তাই মার্কিন বিশেষজ্ঞদের এমন মন্তব্যে এশিয়ার দুই ক্রমবর্ধমান রাষ্ট্রের মধ্যে তিক্ততা বাড়বে বই কমবে না।
পরমাণু বিজ্ঞানীদের ওয়েবসাইট ‘দ্য বুলেটিন’–এর ‘আফটার মিডনাইট’ বলে একটি অনলাইন পত্রিকা রয়েছে। তার জুলাই–আগস্ট সংখ্যায় এমন বিস্ফোরক দাবি করেছেন মার্কিন পরমাণু বিশেষজ্ঞ হ্যান্স এম ক্রিস্টেনসেন এবং রবার্ট এস নোরিস।
‘ইন্ডিয়ান নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ২০১৭’ নামক একটি প্রতিবেদনে তাঁরা লিখেছেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। মূলত পাকিস্তানকে নিশানায় রেখেই এতদিন পারমাণবিক রণকৌশল ঠিক করত দিল্লি। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। পাকিস্তানের বদলে তাদের নিশানায় এখন প্রতিবেশি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। দক্ষিণ ভারত থেকে চীনের সর্বত্র আক্রমণ হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র গড়ে তুলছে তারা।’
তাঁদের দাবি, ১৫০–২০০ টর্পেডো তৈরির উপযোগী প্রায় ৬০০ কেজি প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করেছে ভারত। তবে পুরোটাই টর্পেডো তৈরির কাজে ব্যবহার করা হবে না। খুব বেশি হলে ১২০–১৩০টি টর্পেডো তৈরি করা হয়েছে। পাকিস্তানকে চাপে রাখতেই এতদিন পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে জোর দিয়েছে দিল্লি। তবে বর্তমানে চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের কথা মাথায় রেখেই এগোচ্ছে তারা। পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকীকরণে মন দিয়েছে। এতে ক্ষমতা আরও বাড়বে। তারপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান কী হয়, সেটাই দেখার।
হ্যান্স এম ক্রিস্টেনসেন এবং রবার্ট এস নোরিসের জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে ভারতের হাতে নাকি পরমাণু হামলা চালাতে সক্ষম ৭টি প্রযুক্তি রয়েছে। যার মধ্যে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম বিমান এবং ৪টি ভূমি ও ১টি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হামলা চালাতে সক্ষম ব্যালিস্টিক মিসাইল রয়েছে। আরও ৪টি নতুন প্রযুক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে। দ্রুত গতিতে কাজ এগোচ্ছে। ভূমি ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হামলা চালাতে সক্ষম ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা অনেক বেশি।’
এ প্রসঙ্গে ‘অগ্নি–২’ ক্ষেপণাস্ত্রেরও উল্লেখ করেছেন তাঁরা। বলেছেন, ২০০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটির মাধ্যমে পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ চীনকে নিশানা করা হতে পারে। ইতিমধ্যেই ৪০০০ কিলোমিটার পাল্লার ‘অগ্নি–৪’–এর সফল উৎক্ষেপণ করেছে ভারত। দেশের উত্তর পূর্ব দিক থেকে তাক করলে বেজিং এবং শাংহাই সহ চীনের অধিকাংশ অঞ্চলেই হামলা চালানো যাবে। এছাড়াও আন্তর্দেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘অগ্নি–৫’ রয়েছে। ৫০ টনের এই ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ৫০০০ কিলোমিটারের বেশি। ১৫০০ কেজি টর্পেডো বহনে সক্ষম। মধ্য অথবা দক্ষিণ ভারত থেকে ছুঁড়লেও সমগ্র চীনকে নিশানা করা যাবে।
সূত্র: আজকাল
বিডি প্রতিদিন/ ১৩ জুলাই, ২০১৭/ ই জাহান