দেশত্যাগী রোহিঙ্গাদের সসম্মানে নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যাবার পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি মিয়ানমার সামরিক জান্তার মানবতা বিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার বিচারের পথ সুগম করতে আন্তর্জাতিক জনমত সোচ্চারের অভিপ্রায়ে নিউইয়র্কে বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন প্রটেকশন এ্যান্ড একাউন্টিবিলিটি ইন বার্মা’ শীর্ষক দু'দিনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে।
৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারির শুক্র ও শনিবার এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ‘ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন’ (এফআরসি) নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ১৭ মাস আগে মিয়ানমার সামরিক জান্তার বর্বরতার কবল থেকে প্রাণ বাঁচাতে কমপক্ষে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এ সময়ে মিয়ানমার প্রশাসন কর্তৃক এমন বর্বরতার ঘটনাবলির তথ্য সংগ্রহকারি, সরেজমিনে তদন্তকারি জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের ৩৫ জন কর্মকর্তা নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করবেন এ সম্মেলনে।
হোস্ট সংগঠনের সমন্বয়কারি এবং ‘কমান্ডার কর্তৃক ধর্ষণ’ নামক গ্রন্থের রচয়িতা রাজিয়া সুলতানা এ সম্মেলন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গারা ক্রমান্বয়ে পাঠ্যপুস্তকে গণহত্যার সামিল হয়ে পড়েছি, যা শুরু হয়েছে আমার শৈশব থেকেই।’
গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে সর্বসম্মতভাবে একটি রেজ্যুলেশন হয়েছে, যেখানে বার্মার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই রেজ্যুলেশনে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কিয়াউ সো ও’র মুক্তির দাবি জানানো হয়। এই দুই সাংবাদিক সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে রোহিঙ্গা গণকবরের অস্তিত্ব সম্পর্কিত রিপোর্ট করায় আং সান সু কি সরকার কর্তৃক জেলে নেয়া হয়েছে।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে স্বায়ত্বশাসন চাওয়া আরাকান আর্মি এবং রাখাইন স্টেটে সরকারী ট্রুপসের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টার অধ্যাপক ইয়াংঘি লী এই সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের জানিয়েছেন, রাখাইনের বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে আগ্রহী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে কাজের অনুমতি না দেয়ার ঘটনাটি আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির পরিপন্থী।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার সংগঠক এবং স্কলার এঞ্জেলা ডেভিস বলেন, মিয়ানমারে মুসলিম জনগোষ্ঠী তথা রোহিঙ্গা, কাচিন্স, করেন্স এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞের নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এমন বর্বরতা থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত আমি বার্মাকে বয়কট করে যাবো।
এই সম্মেলনে বক্তব্য উপস্থাপনকারিদের মধ্যে রয়েছেন মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখা ইউএন স্পেশাল র্যাপোর্টার ইয়াংঘি লী, অষ্ট্রেলিয়ার আদালতে আং সান স্যু কি’র বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে লিপ্ত থাকার মামলা দায়েরকারি ডেনিয়েল টেইলর, নারী, শান্তি এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৩২৫ নম্বর রেজ্যুলেশনের বিশ্লেষণকারি লেখিকা অধ্যাপক রাধিকা কুমারাস্বামী, জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক গ্রেগরী স্ট্যানটন এবং ভারতীয় সাংবাদিক তপন কুমার বোস।
বিডি-প্রতিদিন/০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯/মাহবুব