বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ভারত। বিরোধী দলের সাংসদদের ওই অঞ্চলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই নিয়ে সমালোচনার মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমপিদের একটি দলকে কাশ্মীরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হল। খবর আনন্দবাজারের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার মোদি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করে ২৮ এমপির প্রতিনিধি দলটি। মঙ্গলবার তাদের কাশ্মীর যাওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, এটি সরকারি সফর নয়। এমপিরা প্রত্যেকেই বেসরকারিভাবে ভারতে গেছেন। আবার প্রতিনিধি দলে থাকা অনেকেই আবার অতি-দক্ষিণপন্থী, শরণার্থী-বিরোধী বলে পরিচিত দলের সদস্য।
বিরোধীদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়ে বিজেপি সরকারই বাছাই করা এমপিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে কাশ্মীরে পাঠাচ্ছে। যাতে তাদের ইতিবাচক রিপোর্টে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ওঠা প্রশ্নের উত্তর দিতে সুবিধা হয়।
প্রতিনিধি দলের সদস্য বি এন ডান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবটাই ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে বাস্তব পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করব।’’
কংগ্রেসের জয়রাম রমেশের অভিযোগ, এটা ভারতের সংসদের অপমান। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির অভিযোগ, কাশ্মীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে বলে বোঝাতে মরিয়া সরকার অবিরাম কূটনৈতিক ভুল করছে। ফ্যাসিবাদী, অতি দক্ষিণপন্থী ও শরণার্থী-বিরোধী ইউরোপীয় এমপিদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ এবং তার পরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার পরে এই প্রথম কোনো বিদেশি প্রতিনিধিদল কাশ্মীরে যাচ্ছে। অথচ কাশ্মীরেই তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীসহ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকেই আটক করে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরের বাইরে থেকে কোনো রাজনীতিক সেখানে যেতে গেলেও বাধা পাচ্ছেন।
মেহবুবা সোমবার মেয়ের মাধ্যমে টুইট করে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তারা কি তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন না?’’ তার প্রশ্ন, ‘‘৩৭০ রদ করা যদি জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়, তা হলে রাহুল গান্ধীকে কাশ্মীরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন? ফ্যাসিবাদী না হলে, মনে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা না থাকলে কাশ্মীরের টিকিট পাওয়া সম্ভব নয়!’’
বিজেপির সুব্রহ্মণ্যম স্বামী দাবি তুলেছেন, ‘‘এটা জাতীয় নীতির বিকৃতি। অবিলম্বে এই অনৈতিক সফর বাতিল করা হোক।’’
ইউরোপীয় দলটিতে ব্রেক্সিট পার্টি, ল পেন’স পার্টি, বেলজিয়ামের ভিবি-র মতো অতি দক্ষিণপন্থী দলের এমপিরা রয়েছেন।
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘এই বেসরকারি দলটি মূলত অতি দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিবাদীদের, যাদের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক রয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, কেন আমাদের সাংসদরা কাশ্মীরে ঢোকার অনুমতি পান না। অথচ মোদী এদের স্বাগত জানান।’’
কিছুদিন আগেই মার্কিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লির কাছে দাবি তোলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের কাশ্মীরে যেতে দেওয়া হোক। কারণ নয়াদিল্লি যা বলছে, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট তার সঙ্গে মিলছে না। বিরোধীরা মনে করছেন, চাপ কাটাতে মার্কিন কংগ্রেসের বদলে নিজেদের বাছাই করা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীরে নিয়ে যাচ্ছে মোদি সরকার।
বিডি প্রতিদিন/কালাম