দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) কার্যকর করার কোন পরিকল্পনা ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার এখনো নেয়নি। মঙ্গলবার লোকসভায় লিখিত বিবৃতি দিয়ে একথা জানালো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতজুড়ে এনআরসি চালু করার কোনো পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের আছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই এদিন লোকসভায় লিখিতভাবে জানিয়ে দিলেন, এখনও পর্যন্ত দেশজুড়ে নাগরিকপঞ্জি তৈরি করার কোন পরিকল্পনা নেয়নি মোদি সরকার।
বিজেপির একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর বিবৃতিতে এনআরসি চালু করা নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে। বিরোধীরা একাধিকবার অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিল্লির ভোটের আগে এই সমস্যার সমাধান ঘটানোর চেষ্টা করল কেন্দ্র সরকার।
গত বছর শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন, দেশজুড়ে আমরা সিএএ ও এনআরসি চালু করবো। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর থেকেই সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। একাধিক জায়গায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান সাধারণ মানুষ।
দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যেই গত ডিসেম্বরে রামলীলা ময়দানে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ২০১৪ সালে সরকার প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এনআরসি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সাংসদ বা মন্ত্রিসভায়-কোথাও আলোচনা হয়নি।
সুপ্রিমকোর্টের তত্ত্বাবধানে একমাত্র আসমেই এই এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। গত বছরের ৩১ আগস্ট আসামে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকা থেকে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়লে শুরু হয় বিতর্ক।
বিতর্ক এড়াতে গত ৩১ জানুয়ারি সংসদের বাজেট অধিবেশনের শুরুতে যৌথ অধিবেশনে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এনআরসি নিয়ে কোনো শব্দ খরচ করেনি। যদিও ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরেরই ২০ জুন সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মোদি সরকার দেশজুড়ে এনআরসি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রপতি সেসময় এও বলেছিলেন, "অবৈধ অনুপ্রবেশ ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় হুমকি। এর ফলে দেশের একাধিক জায়গায় সামাজিক ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং মানুষের জনজীবনের উপরেও প্রচণ্ড চাপ তৈরি করছে।"
আসামে কোন ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে না বলেও এদিন জানিয়ে দেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। আসামে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হচ্ছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি একথা বলেন। আসামের কংগ্রেস এমপি প্রদ্যুৎ বরদলৈ এর এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মঙ্গলবার লিখিত উত্তরে জানান, "আসাম সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রাজ্য সরকার অসমে কোন ডিটেনশন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়নি।"
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব