রাশিয়ার প্রবল হামলার মুখে ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য জার্মানির উপর চাপ বেড়েই চলেছে। চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সে বিষয়ে বক্তব্য রাখলেও অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা থেকে যাচ্ছে। এমনকি তার নিজস্ব জোট সরকারের মধ্যেও বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ বাড়ছে।
শলৎসকে জার্মান সংসদের প্রতিরক্ষা কমিশনের সামনে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। কমিটির প্রধান সরকারের শরিক এফডিপি দলের নেতা মারি-আগনেস স্ট্রাক-সিমানমান বলেন, ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের পরিস্থিতি এবং সেখানে আটকে পড়া নিরীহ মানুষের অন্তহীন কষ্ট রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রণনীতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে। তাই এ ক্ষেত্রে জার্মানির সহায়তার সঙ্গে ইউক্রেনের মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে।
ইউক্রেনের সরকারের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার পর বৃহস্পতিবার পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাটেউশ মোরাভিয়েৎস্কি বলেন, বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরতে তিনি সরাসরি শলৎসের সঙ্গে কথা বলতে চান। তার মতে, এটা ইউরোপের ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ। এ ক্ষেত্রে জার্মানির অস্পষ্ট অবস্থান মোটেই সহায়ক হচ্ছে না।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও এতকাল সংকটের মাঝে অস্ত্র পাঠাতে নারাজ ছিল জার্মানি। ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পর সেই নীতির আমূল পরিবর্তন সত্ত্বেও ট্যাংকসহ ভারী সামরিক সরঞ্জাম পাঠায়নি শলৎসের সরকার। নানা নীতিগত ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বাস্তব সমস্যার ইঙ্গিত দেওয়ার পর এবার নতুন এক উদ্যোগ নিচ্ছে জার্মানি। এর আওতায় ন্যাটো সহযোগী হিসেবে স্লোভেনিয়া ইউক্রেনকে রাশিয়ায় তৈরি টি-৭২ ব্যাটেল ট্যাংক সরবরাহ করবে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে জার্মানি স্লোভেনিয়াকে মার্ডার ট্যাংক ও ফক্স হুইলড ট্যাংক পাঠাবে।
বৃহস্পতিবার জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিনে লামব্রেশট বলেন, জার্মানি ইউক্রেনের সৈন্যদের আর্মার্ড হাউইৎসার চালানোর প্রশিক্ষণ দেবে। নেদারল্যান্ডস ইউক্রেনকে সেই ট্যাংক সরবরাহ করছে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যাতে সরাসরি জার্মান অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনতে পারে, সেই লক্ষ্যে শলৎসের সরকার আর্থিক ব্যয়ভার বহনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সেই প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগবে।
জার্মান সেনাবাহিনীর নিজস্ব বেহাল অবস্থার প্রেক্ষাপটে শলৎস প্রতিরক্ষা খাতে এককালীন ও ধারাবাহিক ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে বুন্ডেসভেয়ারের পক্ষে ইউক্রেনকে সরাসরি আরও অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে জার্মানির নিজস্ব প্রতিরক্ষার ক্ষমতা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। ভাণ্ডারে সোভিয়েত আমলের যেসব অস্ত্র ছিল, ইউক্রেনকে ইতোমধ্যেই সেগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে শলৎস সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর উপর জোর দিচ্ছেন। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সুবিধার জন্য তিনি সোভিয়েত আমলে তৈরি সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর পক্ষে জোর দিচ্ছেন। পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর অনেক সদস্য দেশের কাছে এমন সরঞ্জাম রয়েছে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে
বিডি প্রতিদিন/কালাম