২০২৫ সাল থেকে ভারতের সকল ট্রাকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অর্থাৎ এসি কেবিন থাকা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (২০ জুন) এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন দেশটির সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়। ট্রাক চালকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, সুস্থতা, কাজের পরিবেশ এবং তাদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
খবর অনুযায়ী, ভারতের লজিস্টিক সেক্টর অর্থাৎ মালপত্র আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ট্রাক চালকরা। কিন্তু সেই ট্রাক চালকদের জীবন মোটেই সহজ নয়। বাড়ি থেকে বহু দূরে, দীর্ঘ সময় ধরে তাদের রাস্তায় রাস্তায় থাকতে হয়। এসময় নানা প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। কোথাও উপযুক্ত বিশ্রামের জায়গাটুকু থাকে না। পাশাপাশি খাবার পানি শৌচালয়ের অভাবও থাকে। ট্রাক চালকদের জীবন থেকে এইসব সমস্যা দূর করে তাদের কিছুটা আরামদায়ক কাজের জায়গা উপহার দেওয়ার লক্ষ্যেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত। আর তারই অংশ হিসাবে সকল ট্রাকের কেবিন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিন দিল্লিতে গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা মাহিন্দ্রা লজিস্টিকের উদ্যোগে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান থেকে নীতিন গড়করি বলেন, আমাদের দেশে ট্রাক চালকের সংখ্যা যথেষ্ট কম। একজন চালক কেউ ১৪ ঘণ্টা, কেউবা ১৬ ঘণ্টা ট্রাক চালান। কিন্তু বাইরের দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে- সেখানে বাস ও ট্রাক চালকদের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমি যেদিন মন্ত্রী হলাম তখনই ভেবেছিলাম যে আমি ট্রাক চালকদের জন্য এসি কেবিন চালু করবো, কেননা ৪৩, ৪৪ বা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে গাড়ি চালাতে চালকদের খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। কিন্তু কিছু মানুষ বিরোধ করেছিল যে তাতে ট্রাকের দাম অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু আজকে এই অনুষ্ঠানে আসার আগে আমি সেই ফাইলে সাক্ষর করে দিয়েছি। যাতে এরপর থেকে ট্রাক চালকদের কেবিন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।
মন্ত্রী আর বলেন, কাজ করার সময় আমাদের সেই ব্যক্তির মানসিক পরিস্থিতির কথা বিচার করতে হয়। যন্ত্র দিয়ে কাজ করলেও সেখানে তেল বা গ্রিজ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে চালকদের সুবিধার কথা কেন ভাবা হবে না। তবে শুধু এসি কেবিনই নয়, ট্রাক চালকদের কাজের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে আরো একাধিক ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে রয়েছে মহাসড়কের ধারে চালকদের বিশ্রামের উপযুক্ত স্থান তৈরি করা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, পর্যাপ্ত শৌচাগারের সুবিধা দেওয়া। এই সম্পর্কিত একটি নীতি নির্ধারণের জন্য ট্রাক প্রস্তুতকারক সংস্থা থেকে শুরু করে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কয়েক হাজার কিলোমিটার রাস্তা আছে অথচ তার পাশে চালকদের জন্য টয়লেট, শৌচাগার কিছুই নেই। আর সেদিকে তাকিয়েই কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রণালয় ৫৭০ টি রাস্তার পাশে এই সকল সুবিধাযুক্ত কেন্দ্র তৈরি করছে, এর জন্য ১৭০ টি দরপত্র চাওয়া হয়েছে এবং তার কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য প্রতি ৫০ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক বরাবর একটি করে সমস্ত সুবিধাযুক্ত কেন্দ্র তৈরি করা। শুধু তাই নয় প্রচন্ড গরমে ট্রাক চালকদের শরীরে আসে ক্লান্তি, আর সেই ক্লান্তির ফলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ে। কিন্তু এসি কেবিন চালু থাকলে সেই দুর্ঘটনাও অনেকটাই কমানো যাবে বলে দাবি মন্ত্রণালয়ের।
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষ়টি নিয়ে এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি দুর্ঘটনার রোধে একাধিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
কয়েকদিন আগেই তিন দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত ট্রাকে যেতে যেতেই ট্রাক চালকদের কাজের পরিবেশ নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন রাহুল। কংগ্রেস নেতার দাবি ছিল ভারতে চালকদের স্বাচ্ছন্দের কথা ভেবে ট্রাক নির্মাণ করা হয় না। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাক নির্মাতাকারী সংস্থাগুলির কাছে ট্রাক চালকদের নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দই প্রথম প্রধান অগ্রাধিকার। রাহুলের ওই মন্তব্যের পরে ভারতের সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়করির এই ঘোষণা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ