শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
যুক্তরাজ্য ও কানাডার নিষেধাজ্ঞা আরোপ

মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিলেন ২০ বছরের তরুণী

মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিলেন ২০ বছরের তরুণী

নিহত মেয়া থুই থুই খাইংয়ের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা

মিয়ানমারে সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রথম প্রাণ দিলেন ২০ বছরের তরুণী মেয়া থুই থুই খাইং। বিক্ষোভ করতে গিয়ে তিনি কয়েকদিন আগে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। এদিকে মিয়ানমারের  সেনাবাহিনীর কয়েকজন জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য ও কানাডা। বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ তরুণী মেয়া থুই থুই খাইংয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে  নেপিডোর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল খাইংয়ের ভাই ইয়ে তুত অংও  টেলিফোনে বোনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ২০ বছর বয়সী এই তরুণী গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেপিডোর বিক্ষোভে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন;  সেদিনের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান, রাবার বুলেট ও তাজা গুলি ছুড়েছিল। খাইংয়ের আঘাতের সঙ্গে তাজা গুলির আঘাতের সামঞ্জস্য আছে বলে সেসময়ই বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী জানিয়েছিল। হাসপাতালটির এক চিকিৎসকও বলেন, ‘আমরা বিচার চাই। তার জন্য আমরা অগ্রসর হব।’ ওই চিকিৎসক জানান, খাইংকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে  নেওয়ার পর থেকেই হাসপাতালের কর্মীরা কর্তৃপক্ষের ব্যাপক চাপের মুখে পড়েন।

এদিকে মিয়ানমারে সামরিক জান্তাবিরোধী গণবিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদুনে গ্যাস, জলকামান ও রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী দল  নেটব্লকস বলেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতেও দেশটিতে কারফিউ জারির মতো পরিস্থিতি ছিল। রাতে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এই পরিস্থিতিতেও ইয়াঙ্গুনে সু চির পোস্টার নিয়ে তাঁর মুক্তি দাবিতে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ করেন। মিয়ানমারের প্রত্যন্ত সাগাইং অঞ্চলেও বিক্ষোভ হয়েছে। তবে বিক্ষোভ সত্ত্বেও ধরপাকড় চালিয়ে যাচ্ছে জান্তা সরকার।   অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স মনিটরিং গ্রুপ বলছে, ৫২০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১২ জন কর্মকর্তাকে আটকের কথা নিশ্চিত করেছে ওই গ্রুপ।

উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে জান্তা সরকার। আটকের পর থেকে নোবেলজয়ী সু চিকে দেখা যায়নি। অবৈধ ওয়াকিটকি রাখা ও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থা আইনের ২৫ ধারা   অনুসারে সু চির বিরুদ্ধে   অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী মার্চে তাঁর অভিযোগের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর যুক্তরাজ্য স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তিনজন জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। দেশটি জানিয়েছে, ওই তিন জেনারেল বিক্ষোভ দমনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। যুক্তরাজ্যের সরকার তিন জেনারেলের সম্পদ জব্দ করেছে ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যুক্তরাজ্যের সরকার জান্তা সরকারের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করার কথাও ভাবছে। কানাডাও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কানাডা বলেছে, জান্তা সরকার দমন ও নিপীড়নমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কানাডার পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক গারনেউ বলেছেন, কানাডার সরকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় মিয়ানমারের জনগণের পাশে রয়েছে।

দুই দেশের নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বিয়ার, রত্ন ও ব্যাংক খাতে জান্তা সরকারের লাভজনক ব্যবসায় আঘাত হানার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। মিয়ানমারে জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মানবাধিকার সংগঠন সিভিল ডিজঅবিডিয়েন্স মুভমেন্ট। সংগঠনটির সক্রিয় কর্মী থিনজার সুনলেই ই গত সোমবার বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছি। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়ে আমরা অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানাই।’

সর্বশেষ খবর