বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে বহুমুখী রাজনীতির সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ ভাগ। ওই সময় বিজেপির উত্তরবঙ্গের নেতাদের একাংশ পৃথক রাজ্যের দাবি তুলেছেন। এই দাবির সব চেয়ে সোচ্চার সমর্থক হলেন জন বার্লা। তিনি এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি তার মত থেকে সরে আসেননি। শনিবার উত্তরবঙ্গে তার মুখে আবার শোনা গেছে পশ্চিমবঙ্গ ভাগ করার দাবি। আর তার পাশে বসা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলেছেন, ‘এখন জঙ্গলমহল বা উত্তরবঙ্গ আলাদা হতে চাইলে তার সব দায়-দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে জিইয়ে রেখে মুখ্যমন্ত্রী চুক্তি সই করেছিলেন, তখন কেন প্রশ্ন ওঠেনি? আমরা আওয়াজ তুললেই বিচ্ছিন্নতাবাদী?’ কিছুদিন আগ পর্যন্ত দিলীপ ঘোষ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ভাগ হওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। দলের সিদ্ধান্ত হলো, রাজ্য ভাগ হবে না। সেই তিনিই তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসে কী করে রাজ্য ভাগকে সমর্থন করলেন, তা নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতাদের মধ্যেই দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে রাজ্য ভাগ হলে তা করবে কেন্দ্রীয় সরকার, তা হলে রাজ্য সরকার কীভাবে এর জন্য দায়ী থাকবে, তার কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা রাজ্য বিজেপি সভাপতি দেননি। তবে বার্লা চলে যাওয়ার পর দিলীপ আবার বলেছেন, শ্যামাপ্রসাদের বাংলাকেই আমরা সোনার বাংলা করব।
সম্প্রতি বিজেপি সংসদ সদস্য লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ রাখিবন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। বাংলার সংস্কৃতি অন্য রকম। জন বার্লা বা দিলীপ ঘোষরা কী বলেছেন, আমি জানি না! তবে এই বাংলা কখনোই ভাগ হবে না।’ বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, দলের সাংসদ বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বার বার একই দাবি তুলছেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেটা দেখেও কিছু বলছে না, তার মানে তারা এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখতে চাইছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যেমন উত্তরবঙ্গ থেকে প্রচুর আসনে জিতেছিল, বিধানসভায় তা হয়নি। বিধানসভায় তৃণমূল উত্তরবঙ্গে লোকসভার তুলনায় অনেক ভালো করেছে। ফলে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে আসন ধরে রেখে তা আরও বাড়ানোর উপায়ও খুঁজতে হবে বিজেপিকে। সে জন্য তারা বিভিন্ন বিষয় সামনে আনতে চাইছে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘বিজেপি নেতারা উত্তরবঙ্গে থাকলে এক রকম বলছেন, কলকাতায় বসে আবার অন্যরকম! ভোটের স্বার্থেই এই দ্বিচারিতা চালাচ্ছে বিজেপি। আগে তৃণমূলও ভোটের জন্য গ্রেটার কোচবিহার, কামতাপুরীর কথা বলে একই জিনিস করেছে। রাজ্যভাগের চক্রান্ত কোনোভাবেই বাংলার মানুষ মানবেন না।’