শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

আরও গভীর হতে পারে খাদ্য - জ্বালানি সংকট

আরও গভীর হতে পারে খাদ্য - জ্বালানি সংকট

বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, সংকুচিত মুদ্রার মান বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি সংকটকে আরও গভীর করতে পারে। বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির সংকুচিত মুদ্রার মান খাদ্য ও জ্বালানির দাম এমনভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে যা খাদ্য ও জ্বালানি সংকটকে আরও গভীর করতে পারে।

এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ এ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে এ-সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বিশ্বমন্দার উদ্বেগের মধ্যে বেশির ভাগ পণ্যের দাম সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে গত মাসের শেষ পর্যন্ত মার্কিন ডলারে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। তবে মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে ৬০ শতাংশ তেল আমদানিকারী বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এই সময়ে দেশি মুদ্রায় তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি পণ্যের উচ্চমূল্য যা কৃষি উৎপাদনে ইনপুট হিসেবে কাজ করে খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। ২০২২ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যমূল্যের মুদ্রাস্ফীতি গড়ে ২০ শতাংশের বেশি ছিল। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে ছিল। তবে চালের দাম স্থিতিশীল থাকার কারণে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরই একমাত্র অঞ্চল যেখানে খাদ্যমূল্য স্ফীতি তুলনামূলক কম ছিল।

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাবলো সাভেদ্রার মতে, বেশির ভাগ দেশেই পণ্যের দাম বাড়লেও বর্তমানে কমেছে। তবে এ কমার হার গত পাঁচ বছরে গড় স্তরের তুলনায় অনেক বেশি। এ বিষয়টি উন্নয়নশীল দেশগুলোয় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার চ্যালেঞ্জকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। একই সঙ্গে খাদ্য সরবরাহকে উৎসাহিত করতে ও বিতরণের সুবিধার্থে এবং প্রকৃত আয়কে সমর্থন করার জন্য নীতিগুলোর একটি বিন্যাস প্রয়োজন। তাঁর মতে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিদ্যুতের দাম বেশ অস্থির ছিল। তবে ধীরে ধীরে বিদ্যুতের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরে বিদ্যুতের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও ২০২৩ সালে বিদ্যুতের দাম প্রায় ১১ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এ ১১ শতাংশ কমার পরও ২০২৩ সালে বিদ্যুতের দাম গত পাঁচ বছরের তুলনায় গড় ৭৫ শতাংশ বেশি হবে।

এ ছাড়া ২০২৩ সালে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ৯২ ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা পাঁচ বছরের গড় থেকেও বেশি। প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার দাম ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কমার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা ও মার্কিন প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বিগত পাঁচ বছরে তাদের গড় দ্বিগুণ হবে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম প্রায় চার গুণ বেশি হতে পারে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ইকোনমিস্ট জন ব্যাফেস জানান, কৃষিপণ্যের মূল্যহ্রাসের পূর্বাভাস বিভিন্ন ঝুঁকির বিষয়। প্রথমত ইউক্রেন বা রাশিয়ার রপ্তানি ব্যাঘাত আবার বিশ্বব্যাপী শস্য সরবরাহে বাধা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত জ্বালানির দামের অতিরিক্ত বৃদ্ধি শস্য ও ভোজ্য তেলের দামের ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তৃতীয়ত বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন কমাতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর