বছর ঘুরতে চলল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের। সেই ২৪ ফেব্রুয়ারি যত এগিয়ে আসছে ততই ইউক্রেনে হামলার মাত্রাও বাড়িয়ে দিচ্ছে রাশিয়া। এর মধ্যে গতকাল ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কৃষ্ণসাগরে ভাসমান একটি জাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়েছে। একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে ইউক্রেনের দক্ষিণে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আটটি ক্যালিবর ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করেছে। কিন্তু অন্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করা যায়নি। উত্তর ও পশ্চিম ইউক্রেনে আছড়ে পড়ে সেগুলো। মধ্য ইউক্রেনের নিপ্রোপেত্রোভস্ক এবং কিরোভোগ্রাদও রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আক্রান্ত। মোট ৩২টি ক্ষেপণাস্ত্রে বিপর্যস্ত ছোট্ট দেশটি। এদিকে লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেছেন, ইউক্রেনের বাখমুতের পর এবার লুহানস্ক অঞ্চলে তুমুল আক্রমণ চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। গতকাল ইউক্রেনীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। খবর আলজাজিরার। তিনি বলেন, আজ ইউক্রেনের জন্য সব দিক থেকে কঠিন, কারণ রুশ বাহিনীর আক্রমণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গোলাবর্ষণও অনেক বেড়েছে, এমনকি বিমান বাহিনীর আক্রমণও।
এর আগে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাখমুত শহরে রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ হামলায় আরও নয়জন আহত হয়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি ভবন। রাশিয়ার গোলাবর্ষণের কারণে ইউক্রেনের বাখমুত ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশ্চুক।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের বাখমুত শহর দখলের জন্য অদম্য লড়াই করছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেন কোনোভাবেই এটি রাশিয়ার কবলে ছেড়ে দিতে নারাজ।
আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর পশ্চিমি জোটের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ইউক্রেনকে আরও সাহায্য পাঠানো হবে। তার পরই বৃহস্পতিবার জোরদার হামলা রাশিয়ার। ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হানা মালয়ার সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনে ২৪ ঘণ্টা ধরে ভয়ানক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মস্কো। তিনি লিখেছেন, ‘পরিস্থিতি খুবই জটিল হয়ে রয়েছে। শত্রুদের লক্ষ্য পূরণ করতে দেবে না আমাদের যোদ্ধারা। ওদেরও বড়সড় ক্ষতি হচ্ছে।’
এদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে, লুহানস্ক অঞ্চলের একাংশে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। যদিও তাদের দাবির সত্যাসত্য যাচাই করা যায়নি। রুশ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, ‘আগে যে নিয়ন্ত্রণরেখা ছিল, তার থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে সরে গিয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী।’ দোনেৎস্কেও যুদ্ধ চলছে।
ভূখণ্ড ছেড়ে পুতিনের সঙ্গে চুক্তি : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশের অংশবিশেষ ছেড়ে দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো শান্তি চুক্তি করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের বছরপূর্তি উপলক্ষে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দিলে, তারা আরও ভূখণ্ডের জন্য ‘বারবার আসতে থাকবে’। পশ্চিমারা যত দ্রুত অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করবে, শান্তি তত দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হবে বলেও মন্তব্য তার। জেলেনস্কির অনুমান, রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনে তাদের বসন্তকালীন আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে। ‘একাধিক দিক থেকে আক্রমণ করছে তারা,’ বলেছেন তিনি। তবে তার বিশ্বাস, ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণ শুরুর আগে পর্যন্ত কিয়েভ বাহিনী রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে।