ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আবারও কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির অভ্যন্তরে আরও অগ্রসর হলে পুরো শহরটি তাদের জন্য গোরস্তানে পরিণত হবে। এরই মধ্যে স্থল অভিযানে গিয়ে কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে গাজাকে ক্ষয়িষ্ণু যুদ্ধের ময়দান হিসেবে অ্যাখা দিয়েছে। হিব্রু ভাষায় প্রকাশিত এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের ওপরই তাদের হাতে থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের ভাগ্য নির্ভর করছে। হামাস যোদ্ধারা গাজা সিটির সব এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বন্দিরা এখন গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে। যতক্ষণ নেতানিয়াহু এই বন্দিদের ‘হত্যার’ জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকবেন, ততক্ষণ আল-কাসাম ব্রিগেড তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে আরও অগ্রসর হয়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছে, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো গাজা সিটির কেন্দ্রস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে শহরজুড়ে ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত অন্তত ৩৩ জনের লাশ আল-শিফা হাসপাতালে আনা হয়েছে। একই দিনে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় চার সেনা নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এ ছাড়াও অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জর্ডানের মধ্যে একটি ক্রসিংয়ে এক জর্ডানি বাসিন্দার গুলিতে দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। ট্রাকযোগে আসা ওই ব্যক্তি সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর গুলি চালায়। ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নিশ্চিত করেছে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দুই সেনা মারা যান।
এদিকে দখলদার ইসরায়েলের ইলাত শহরের একটি হোটেলের সামনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। ড্রোনটি হোটেলের প্রবেশদ্বারে এসে পড়ে। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা দ্রুত পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে।-আল জাজিরা ও প্রেস টিভি
টাইমস অব ইসরায়েলের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এই হামলার পেছনে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত ইলাত শহরটি এবং একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এটি।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা সিটিতে দখলদার ইসরায়েলের লাগাতার বিমান ও ড্রোন হামলায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ১৪১। এর মধ্যে শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে আরও ৭৯ জন। আহত হয়েছে ২২৮ জন। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় অনেক লাশ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় পড়ে আছে। উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
এ ছাড়া অপুষ্টি ও অনাহারে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে একটি শিশু। অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অনাহারে মারা গেছে ৪৩৫ জন ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে ১৪৭টি শিশু।