যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজায় অন্তত ১৫ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর ঘরে ফিরছে গাজাবাসী। তবে সেখানে এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। খাবার ও পানির জন্য হাহাকার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-কে সহায়তা করছে না ইসরায়েল। মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিংও অবরুদ্ধ করে রেখেছে তারা। এর ফলে ত্রাণবাহী ট্রাক অভুক্ত গাজাবাসীর কাছে পৌঁছাতে পারছে না। হামাসের নেতৃত্বে ইউএনআরডব্লিউএর কিছু কর্মী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এমন অভিযোগ তোলে ইসরায়েল। যদিও কোনো প্রমাণ ছাড়াই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তাদের নিষিদ্ধ করে। এ বিষয়ে একই সুরে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কো রুবিও। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ইউএনআরডব্লিউএ কার্যত হামাসের একটি সহযোগী সংস্থা হয়ে উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে আগেই জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত-আইসিজে তাদের পদক্ষেপ পরিষ্কার করেছে। বৃহস্পতিবার এক রায়ে আদালত বলেছে, ইসরায়েল দখলদার গোষ্ঠীর মতো স্থানীয় জনগণের খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহে বাধা দিতে পারে না। এটি আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজাবাসীর সহায়তায় ইউএনআরডব্লিউএর কোনো বিকল্প নেই। সংস্থাটির সঙ্গে হামাসের কোনো সম্পর্ক নেই। গাজায় মানবিক কার্যক্রমের মেরুদণ্ডের মতো ভূমিকা রাখছে ইউএনআরডব্লিউএ। এদিকে, কায়রোয় বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেছে হামাস। তারা জানিয়েছে, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা পরিচালনায় একটি স্বাধীন কমিটির কাছে দায়িত্ব দিতে সবাই রাজি আছে। ইসরায়েলের গাজা অভিযানে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৫ জন। একই সময়ে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত ফিলিস্তিনের গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও টেকসইভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অভিজ্ঞ কূটনীতিক স্টিভ ফ্যাগিনকে নতুন বেসামরিক প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্টিভ ফ্যাগিন দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি একই সঙ্গে ইয়েমেনের রাষ্ট্রদূতের পাশাপাশি ইরাকের বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবেও তিন মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেসামরিক প্রধান হিসেবে স্টিভ ফ্যাগিন এ দায়িত্ব পালন করবেন।
ফ্যাগিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্যাট্রিক ফ্র্যাঙ্কের সঙ্গে কাজ করবেন। প্যাট্রিক ইতোমধ্যেই ‘সিভিল-মিলিটারি কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’-এর সামরিক প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। অক্টোবরের ১০ তারিখে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর ১৭ অক্টোবর ইসরায়েলে এই কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। এ কেন্দ্রটির কাজ হলো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ এবং গাজায় ত্রাণ সরবরাহসহ অন্যান্য লজিস্টিক কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। জানা গেছে, প্রায় ২০০ মার্কিন সেনা বর্তমানে কেন্দ্রটিতে কাজ করছেন।-আলজাজিরা
সেখানে ইসরায়েল, ইউরোপীয় দেশসমূহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছেন মার্কিন সেনারা।