আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি আসনের সবটিতেই জয়ের লক্ষমাত্রা বেধে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি। সোমবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
রাজ্য ও জেলা স্তরের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি যে বলছি ৪২ টির মধ্যে ৪২ টাতেই জিতবে হবে-এটা কথার কথা নয়। এটা আমাদের পদক্ষেপ চাই। এটা পরিকল্পনা করে করতে হবে। সিপিআইএম বা কংগ্রেস কী করলো আমাদের দেখার দরকার নেই। এবারের নির্বাচনেও দেখা যাবে সিপিআইএম-কংগ্রেস ও বিজেপি কোথাও কোথাও এক সাথে কাজ করবে। কিন্তু তার আগে আমাদের একসাথে জোট বাঁধতে হবে। আমরা যখন বলেছি তখন ৪২ টা আসনের মধ্যে ৪২ টাই চাই।’
এরাজ্য ছাড়া দেশের আরো কয়েকটি রাজ্যেও তার দল লড়াই করবে বলে এদিন জানান মমতা।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘দিল্লিতে এক সরকার চলছে...জগাই ও মাধাই সরকার। তারা দুই ভাই (মোদি-অমিত শাহ)। যারা দাঙ্গা করে অভ্যস্ত, তারা এখন দেশ চালাচ্ছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরাই যারা ওদের হাতে দেশের দায়িত্বভার তুলে দিয়েছিলাম। সে সময় মিডিয়াও সারাক্ষণ মোদি মোদি করে বেড়াচ্ছিল। কেউ প্রতিবাদ করতে পারলো না। আমরা প্রতিবাদ করেছি বলে আমাদের ওপর ওদের এত জ্বালা। আমাদের এই জ্বালা মেটানোর জন্য ওরা যাই করুক না কেন-আমরা তার ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেবো।
তিনি আরো বলেন, অত্যাচারী, স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে যদি জাগতে হয় তবে মনে রাখতে হবে একটা সংকল্প নিয়ে ফিরে যেতে হবে, তা হল-ভারতে আগামী দিনে পরিবর্তন চাই-ই। মোদি-অমিত শাহ বিদায় চাই। বিজেপি হাটাও, দেশ বাঁচাও। আমরা বলেছিলাম ২০১৯, বিজেপি হবে ফিনিশ।’
মমতার অভিমত, ‘আমরা যদি ৩৪ বছর লড়াই করে রাজ্য থেকে বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করতে পারি, তবে পাঁচ বছরে মোদির স্বৈরাচারী সরকারকেও হটাবো।’
পাঁচ বছর আগে ভারতের সর্বত্র যখন মোদি ঝড়ে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলো যখন খড়কুটো মতো উড়ে গিয়েছিল সেখানে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই থেমে গিয়েছিল গেরুয়া রথ। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল মাত্র ২ টি আসন। অন্যদিকে মমতার নেতৃত্বেই তৃণমূল একাই ৩৪ টি আসনে জয় পেয়েছিল তারা। এদিনের বৈঠক থেকে তাকেও ছাপিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
পুলওয়ামা জঙ্গি হামলা নিয়েও মোদিকে সরাসরি নিশানা করেন মমতা। তার অভিযোগ, জওয়ানদের মৃত্যু নিয়ে মোদি ভোটের রাজনীতি করছে।
মমতা বলেন, ‘পুলওয়ামায় যে ঘটনা ঘটল আমরা প্রত্যেকেই তার নিন্দা করি। আমরা শোকাগ্রস্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাই। কিন্তু কেন এই হামলা হয়েছিল মোদি বাবু? হামলার সময় আপনি কোথায় ছিলেন?’ তার দাবি, ‘ঘটনাটা যে ঘটবে তা আপনি আগে থেকেই জানতেন। আপনার কাছে তথ্য ছিল, সরকারের কাছেও গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল কিন্তু কেন সেদিন জওয়ানদের এয়ার লিফট না করে বা রাস্তাগুলো বন্ধ না করে কিংবা সেখানে প্রহরা না বসিয়ে জওয়ানদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন? রাজনীতি করবেন বলে? ভোট আসছে বলে, ভোটের রাজনীতি? কিন্তু মনে রাখতে হবে জওয়ানদের রক্ত দিয়ে ভোটের রাজনীতি হয় না। কিছুদিনের জন্য মানুষকে ভুল বুঝিয়ে রাখা যায় কিন্তু চিরদিনের জন্য তা সম্ভব না।’
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সারা দেশজুড়ে বৈদ্যুতিক ভোট যন্ত্রে (ইভিএম) গরমিল করার চেষ্টা করতে পারে বলেও অভিযোগ এনেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।
মমতা আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে এরাজ্যে ইভিএম মেশিন ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করা হতে পারে। কোনো একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওরা ভাবছে ইভিএম ট্যাম্পারিং করে ২৩/২৪ টা আসন পাবে এখানে। কিন্তু আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লক্ষ্য রাখবো। খেলাটা অত সস্তা নয়। আপনি যাকে দিয়ে করাবেন হয়তো সেই আপনাকে উল্টে দেবে। সবকিছু গায়ের জোরে হবে না।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন