বাবা-মা আগেই মারা গেছেন, তাই সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে দেশ ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল বছর বারোর কিশোর। চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে খালি মালবাহী ট্রেনেও উঠে পড়েছিল। কিন্তু অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ওই বাংলাদেশি কিশোরকে আটক করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
রবিবার সন্ধ্যায় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল সুসংহত চেক পোস্ট (আইসিপি)-এর কাছে একটি ফাঁকা পণ্যবাহী ট্রেনের কামরা থেকে ওই বাংলাদেশি কিশোরকে আটক করে বিএসএফ, পরে তাকে তুলে দেওয়া হয় ভারতীয় রেল পুলিশের হাতে।
সোমবার বিএসএফ’এর পক্ষ এক বিবৃতি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এসময় ফাঁকা মালবাহী ট্রেনের একটি কামরার মধ্যেই ওই কিশোরকে দেখে কিছুটা হতচকিত হয়ে যান বিএসএফ’এর সদস্যরা। এরপর তাকে ওই ট্রেন থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাতেই জানা যায়, ১২ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি কিশোরের বাড়ি বাগেরহাট জেলার কালামপুরে। কিশোরের নাম আল-আমিন, বাবার নাম আলমগীর হোসেন। যদিও ওই কিশোর জানায়, তার বাবা ও মা অনেকদিন আগেই মারা গেছেন।
সে নিজেই জানায়, হৃদয় নামে নিজের গ্রামেরই এক পরিচিত বন্ধু (দালাল) তাকে কলকাতায় কাজের লোভ দেখিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। গ্রাম ছেড়ে সে প্রথমে বেনাপোল রেল স্টেশনে আসে। সেখানেই এক অপরিচিত নারী তাকে ওই ফাঁকা ট্রেনে চাপিয়ে দেয় এবং তাকে বলা হয় যে ট্রেনটি কলকাতার দিকে যাচ্ছে। এরপর আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্টে পৌঁছানোর পরই বিএসএফ-এর রুটিং পরীক্ষায় সে ধরা পড়ে।
ওই কিশোর এও জানিয়েছে, যে বন্ধুর কথায় সে ঘর ছেড়ে ভারতে আসছিল, সেও বেশ কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে কলকাতাতে অবস্থান করছে এবং এখানেই কাজ করছে। যদিও ওই বাংলাদেশি কিশোরের কাছ থেকে কোন অর্থ বা আপত্তিকর কোন বস্তু পাওয়া যায়নি। বিএসএফ’এর কর্মকর্তাদের ধারণা ভারতে শিশু শ্রমিক হিসাবে তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্যই তাকে পাচার করা হচ্ছিল।
ইতিমধ্যেই ওই কিশোরের শারীরিক পরীক্ষা করে বনগাঁ রেল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই কিশোরের বক্তব্যের সত্যতাও যাচাই করে দেখছে পুলিশ। এব্যাপারে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও বিএসএফ’এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক