অবশেষে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন বনমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি। তবে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও এখনই দল অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস’এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন না তিনি।
বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্য সরকার ও রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের দলের কাজকর্ম নিয়ে বিক্ষুদ্ধ ছিলেন রাজীব। এমনকি বেশ কয়েকটি ক্যাবিনেট বৈঠকেও তাকে অনুপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক কালে একাধিক ইস্যুতে বেসুরো গাইছিলেন রাজীব। কয়েকদিন আগে ফেসবুক লাইভে এসেও রাজীব বলেছিলেন দলের কয়েকটি সিদ্ধান্তে তিনি মনক্ষুণ্ণ, তাকে স্বাভাকিবাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। দলের মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও সরব হন তিনি। ফলে জল্পনা ছিলই, তবে কি তিনিও শুভেন্দু অধিকারীর মতোই তৃণমূল চেলে বিজেপিতে নাম লেখাবেন।
রাজীবের অসন্তোষ ও ক্ষোভ নিয়ে তৃণমূলও ওয়াকিবহল ছিল। রাজীবকে বোঝাতে দলের মহাসচিব ও সিনিয়র মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি কয়েকবার ফোনেও কথা বলেন, দুই জনের মধ্যে বৈঠকও হয়। কিন্তু সমাধান সূত্র বের হয়নি।
নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে এদিনই মমতা ব্যনার্জির কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠান রাজীব। সেখানে তিনি লেখেন ‘রাজ্যের মানুষের জন্য কাজ করতে পারার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি। আমাকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করছি।’ মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারের কাছে ইস্তফা পত্রের একটি প্রতিলিপ পাঠান রাজীব।
নিজের ইস্তফা নিয়ে এদিন বিকালে রাজভবনের সামনে সাংবাদিকদের সামনে রাজীব বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন আমি চেষ্টা করেছি রাজ্যের মানুষের স্বার্থে নিষ্ঠার সাথে সেই দায়িত্বপালন করতে। আড়াই বছর আগে আমাকে সেচ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকা কালীন সময়ে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেটা আমি টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী কাকে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেবেন তা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার। কিন্তু একজন সহকর্মী হিসাবে আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এই আশা করেছিলাম যে সৌজন্যতার খাতিরে আমাকে সেটা জানানো হবে। কিন্তু টিভির পর্দায় আমাকে জানতে হয়েছিল যে আমার দফতর পরিবর্তন করা হয়েছে। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমি মন্তিত্ব থেকে পদত্যাগ করবো এবং একজন দলীয় কর্মী হিসাবে কাজ করবো।’ তিনি আরও জানান ‘বিগত কয়েকদিন আমার কয়েকজন সহকর্মীর কথা আমাকে অত্যন্ত আঘাত করেছে, মর্মাহত করেছে, আমি বেদনাগ্রস্থ হয়েছি। আমি মানসিক দ্বন্দ্বে ছিলাম। এই ক্ষত আমার মনে ছাপ ফেলেছে। তাই আজ এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’
তবে সূত্রে খবর, এখনই তৃণমূল কংগ্রেস না ছাড়লেও কয়েকদিনের মধ্যেই দলের সদস্যপদও ছেড়ে দিতে পারেন রাজীব। তারপর বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন।
এদিকে রাজীবের ইস্তফা প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন ধরেই ক্যাবিনেট বৈঠকে আসছিলেন না। উল্টে ফেসবুক লাইভে গিয়ে দলের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন। দলের তরফে ওকে বোঝাবার নানা চেষ্টা হয়েছে। পার্থ চ্যাটার্জিও তার সাথে বহুবার কথা বলেছেন। কিন্তু উনি না বুঝলে কি আর করা যাবে? ওর বিরুদ্ধে দল হয়তো ব্যবস্থা নিতো কিন্তু তার আগেই উনি পদত্যাগ করেছেন, তাতে ভালোই হয়েছে।’ রাজীবের পদত্যাগের ফলে দলে কোন প্রভাব ফেলবে না বলেও দাবি দমদমের তৃণমূল সাংসদের। সৌগত রায় বলেন ‘রাজীব একজন (এমএলএ) বিধায়ক ছিলেন মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। তিনি মন্ত্রিত্বে থেকেও কোনও কাজ করছিলেন না।’
অন্যদিকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন তিনি বলেন, ‘রাজীব ব্যনার্জি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন ঠিকই কিন্তু এখনও তৃণমূলেই আছেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত উনি দল ছাড়ছেন, আমরা কিছু করতে পারবো না। কিন্তু আমরা ওর জন্য অপেক্ষা করবো।’
যদিও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সদস্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মবাষির্কী উপলক্ষ্যে আগামীকাল ২৩ জানুয়ারী পশ্চিমবঙ্গে আসছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই তার আগে রাজীবের এই ইস্তফা নানা জল্পনা উস্কে দিল।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল