৫ আগস্ট, ২০২২ ২০:২৭
১৪ দিনের জেল হেফাজতে পার্থ-অর্পিতা

অর্পিতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার পার্থর

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

অর্পিতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার পার্থর

পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখার্জি। ফাইল ছবি

স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে (বিচার বিভাগীয় হেফাজত) নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার আদালত। ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হওয়া পার্থঘনিষ্ঠ মডেল, অভিনেত্রী অর্পিতা মুখার্জিকেও একই নির্দেশ দেন আদালত।

দুদিনের ইডির রিমান্ড শেষে শুক্রবার ফের তাদের উভয়কেই কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। আদালতের কাছে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের আবেদন জানানো হয় ইডির তরফে। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। সেক্ষেত্রে আগামী ১৮ আগস্ট পর্যন্ত তাদের জেল হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের এই নির্দেশের ফলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রাখা হবে প্রেসিডেন্সি কারাগারে। অন্যদিকে অর্পিতা মুখার্জিকে রাখা হবে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।

এদিন আদলতে শুনানি চলাকালীন ‌‘প্রভাবশালী তত্ত্ব’ নিয়ে পার্থর আইনজীবী কৃষ্ণ চন্দ্র দাস জানান, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় একজন সাধারণ মানুষ। উনি কোথাও পালানোর লোক নন। এখনো পর্যন্ত কোনো সম্পত্তি পার্থর কাছ থেকে উদ্ধার হয়নি। কোনো ঘুষ নেননি, ঘুষ নেওয়ার কোনো প্রমাণ মেলেনি। যে সমস্ত জমি বা সম্পত্তির দলিল এখনো উদ্ধার হয়েছে তাও সব নকল। প্রয়োজনে তিনি বিধায়কের পদ থেকেও ইস্তফা দিতে পারেন। তাছাড়া তার ক্রমাগত মেডিকেল পরীক্ষার প্রয়োজন। তাই যে কোনো শর্তে পার্থকে জামিন দেওয়া হোক।’ পার্থর সাথে অর্পিতার ঘনিষ্ঠতার কথাও এদিন খারিজ করে দেন পার্থর আইনজীবী। 

অন্যদিকে অর্পিতার আইনজীবী আদালতে জানান, তাকে যেন ডিভিশন ওয়ান প্রিজনার হিসেবে দেখানো হোক। কারণ, অর্পিতা উচ্চশিক্ষিতা। কারাগারে তার প্রাণহানির আশঙ্কা থাকতে পারে। পানি ও খাবার দিলে তাও যেন পরীক্ষা করে দেওয়া হয়।’ 

যদিও জামিনের প্রবল বিরোধিতা করে ইডির তরফে আদালতে জানানো হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায় যথেষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি, তাকে যেন জামিন না দেওয়া হয়। 

ইডির আইনজীবীর বক্তব্য ছিল ‘পার্থ তদন্তে অসহযোগিতা করছেন। তিনি এখনো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। পার্থর আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অর্পিতার যোগাযোগ ছিল। সংস্থার নথি পাওয়া গেছে যেখানে পার্থ নাম রয়েছে এবং পার্থ ও অর্পিতা যৌথ অংশীদারিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া একাধিক নথি, ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া গেছে, যেখান থেকে পরিষ্কার শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে পার্থর সরাসরি সম্পর্ক ছিল। 

এর আগে এদিন সকালে ইডির আঞ্চলিক কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় জোকার ইএসআই হাসপাতালে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সেখান থেকে বেরোনোর সময় গণমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন অর্পিতা। তিনি বলেন, ‘ইডিকে যা স্টেটমেন্ট দেওয়ার দিয়েছি।’ হাসপাতাল থেকে তাদের উভয়কে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতে। 

তবে গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে পার্থ ছিলেন নীরব, নিশ্চুপ। মুখে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় হুইল চেয়ারে বসেই হাসপাতালে ঢুকে পড়েন।

স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ২৩ জুলাই ইডির হাতে গ্রেফতার হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ২৪ জুলাই গ্রেফতার হন পার্থ ঘনিষ্ঠ মডেল, অভিনেত্রী অর্পিতা। 

অর্পিতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘড়িয়ার দুটি ফ্লাট থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ কোটি রুপি। এছাড়া কয়েক কোটি রুপির সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা, সোনা ও হীরের গহনা, স্বর্ণ-রূপার কয়েন, নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট, বাগানবাড়ির সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু সেই অর্পিতাকেই চেনেন না বলেই দাবি পার্থর।

আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত দুজনেই গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইডির রিমান্ডে ছিলেন। নিজেদের হেফাজতে থাকাকালীন ইডির কর্মকর্তারা দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতদিন আলাদা আলাদাভাবে তাদের জেরা করা হলেও সূত্রে খবর বৃহস্পতিবার তাদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। সেখানেই অর্পিতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করেন পার্থ। 

ইডি সূত্রের দাবি বৃহস্পতিবার অর্পিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে পার্থকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তাকে চেনেন কি না। পার্থ বলেন, ‘না তেমনভাবে নয়’। পার্থর দাবি  ‘অনেকেই তার কাছে আসতেন, অর্পিতাকেও সেভাবে মাঝেমধ্যে দেখেছেন’। 

এরপর পার্থকে প্রশ্ন করা হয়, ‘অর্পিতা কি আপনার ঘনিষ্ঠ’? পার্থ সরাসরি তা অস্বীকার করে জানান, ‘নাকতলার পূঁজায় দেখেছেন’। তদন্তকারীরা প্রশ্ন করেন ‘অর্পিতার বাড়ি থেকে রুপি উদ্ধারের কথা তিনি জানেন কি না? জবাবে পার্থ বলেন, ‘তিনি শুনেছেন’। এরপর প্রশ্ন করা হয় উদ্ধার ওই বিপুল অর্থ কি তার? জবাবে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একদমই না।’ তবে সেই রুপি কার? জবাবে পার্থ জানান, ‘এই রুপি কার, তা তার জানা নেই।’  

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে পার্থকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এ রুপি আমার নয়, আমার নয়, আমার নয়’। 

এর আগে দুইবার সংবাদমাধ্যমের সামনে অর্পিতাও দাবি করেন, ‘এই রুপি কার তা তার জানা নেই। তার অজান্তে ও অনুপস্থিতে কে বা কারা তার ফ্ল্যাটে ওসব রুপি রেখে গেছেন।’  
 
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর