১০ আগস্ট, ২০২২ ১৭:২৩

অষ্টমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নীতিশ, উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

অষ্টমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নীতিশ, উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী

অষ্টমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নীতিশ, উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী

বিহারে ফের নতুন সরকার গঠন করলেন নীতিশ কুমার। বুধবার দুপুর দুইটার দিকে রাজ্যটির রাজভবনে অষ্টমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। আর উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন লালু প্রসাদ যাদবের ছেলে ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব। তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল ফাগু চৌহান। মোট সাত দলের সহযোগিতায় মহাজোটের এই সরকার গঠিত হলো। শপথ নেওয়ার পরই নীতিশ এবং তেজস্বী একে অপরকে শুভেচ্ছা জানান।

এরপরই সংক্ষিপ্ত ভাষণে মোদিকে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন নীতিশ। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য লালায়িত নই। কিন্তু আমার একটাই প্রশ্ন, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যিনি ২০১৪ সালে দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন, ২০২৪ এর সাধারণ নির্বাচনে তিনি কি ফের ক্ষমতায় আসবেন?

মানুষের রায়কে অবমাননা করার যে অভিযোগ বিজেপি তার বিরুদ্ধে তুলেছে সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমি থাকি বা না থাকি, তারা (বিজেপি) কি চায়, সেটা তারাই বলতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের নির্বাচনী ফলাফলের পর আমি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাইনি। কিন্তু আমার উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। দলের বাকিদের জিজ্ঞাসা করুন তাদের কোথায় নামিয়ে আনা হয়েছে। তারপর আপনারাও দেখেছেন কি হয়েছে।

তবে এদিন নীতিশ ও তেজস্বী-এ দুজনেই শপথ নিয়েছেন। আগামী ১৫ আগস্ট বাকি মন্ত্রিসভা গঠন হবে বলে জানা গেছে। এদিনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবীসহ লালু প্রসাদের পরিবারের সদস্যরা এবং বেশ কিছু ভিআইপি ব্যক্তি।

এর আগে মঙ্গলবার দলের সাংসদ, বিধায়ক এবং শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন নীতিশ কুমার। সেই বৈঠকেই বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নীতিশ। এরপর বিকেলে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগ পত্র জমা দেন তিনি। রাজভবন থেকে সরাসরি লালু প্রসাদ যাদব-রাবড়ি দেবীর বাসভবনে গিয়ে তেজস্বী যাদবের সাথে দেখা করেন। সেই বৈঠকে মহাজোটের সাথে নতুন করে সম্পর্ক শুরু করার উপরে জোর দেন নিতীশ। এরপর তেজস্বী যাদবকে সাথে নিয়েই ফের রাজ্যপালের সাথে দেখা করতে যান নিতীশ কুমার এবং তার সামনে সরকার গঠনের দাবি পেশ করেন। মোট ১৬৪ জন বিধায়কের সমর্থনের চিঠি রাজ্যপালের কাছে জমা দেন। এর মধ্যে জেডিইউ ৪৫ জন, আরজেডির ৭৯, কংগ্রেসের ১৯, বামেদের ১৬, হ্যাম পার্টির চারজন ও স্বতন্ত্র দলের একজন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২৪৩ আসন বিশিষ্ট বিহার বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ১২২। সেখানে মহাজোটের সংখ্যা অনেক বেশি রয়েছে। 

পরে সংবাদ সম্মেলন করে নিতীশ কুমার জানান, বিহারের সার্বিক উন্নয়নের সাতটি দল একত্রিত হচ্ছে। বিহারের মহাজোট সরকারের আরজেডি ছাড়াও সমর্থন দেওয়ার কথা জানায় কংগ্রেস, সিপিআইএমএল ও হামসহ একাধিক আঞ্চলিক দলগুলো।

মঙ্গলবারই তেজস্বী যাদব বলেছিলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং বিহারের মানুষের প্রতি ন্যায় বিচার করতে এই সরকার গঠন করা হচ্ছে। বিজেপির দিকে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, তারা অনেক রাজ্যের স্থানীয় দলগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। পাঞ্জাব থেকে মহারাষ্ট্র বহু রাজ্যে অস্থিতিশীলতা ও স্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা হয়েছে। 

অন্যদিকে নিতীশকে নিশানা করেছে বিজেপি। দলের নেতা রবি শংকর প্রসাদ বলেন, নীতিশ আবারও মানুষের রায়কে অবমাননা করেছেন। যে নীতিশ একসময় লালু শাসনকালকে ‘অরাজকতা’র বলেছিলেন এবং মহাজোট থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই নিতীশ এখন আবার তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে। এটা মানুষের দেওয়া রায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

কারণ বিজেপির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এর আগেও ২০১৫ সালে লালু প্রসাদ যাদবের হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রী হন নীতিশ। সেবারও তাদের জোটসঙ্গী ছিল কংগ্রেস। সেই সময় নীতিশের মন্ত্রিসভায় উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তেজস্বী যাদব। কিন্তু বিজেপি তেজস্বীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হলে ২০১৭ সালে জোট ভেঙে বেরিয়ে ফের বিজেপির হাত ধরেন নীতিশ কুমার এবং রাতারাতি বিহারের নতুন সরকার গড়ে তোলেন। আর কার্যত তারপর থেকেই নীতিশকে দলবদলু বলে কটাক্ষ করে থাকে লালু-তেজস্বী। যদিও সেই পুরনো তিক্ততা ভুলে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চান নীতিশ-তেজস্বী উভয়ই।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর