১ জুন, ২০২৩ ১৩:৫৫

বিশ্বভারতীর কলাভবনের ছাদে পদ্মপুকুর, ফুটেছে পদ্ম-শালুক

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বিশ্বভারতীর কলাভবনের ছাদে পদ্মপুকুর, ফুটেছে পদ্ম-শালুক

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ছাদে তুলির টানে আস্ত একটি পুকুর বানিয়ে তাতে পদ্ম ফোঁটালেন বিশ্বভারতীর এক শিক্ষার্থী। নীল পানিতে ফুটে রয়েছে শালুক-পদ্মফুল! ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে শিল্পী সুমন দে'র এই শিল্পকর্মের ছবি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই প্রশংসার বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন সুমন। কৃত্রিম এই পুকুরে ছবি তুলতে অনেকে ভিড়ও জমাচ্ছেন। 

বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দা সুমন দে। বিশ্বভারতীর কলাভবনের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সে। একার দক্ষতায় তিনি এই কাজটি করেছেন। রং, তুলিসহ সম্পূর্ণ খরচও তিনি নিজেই বহন করেছেন। 

পরীক্ষার জন্য যখন প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজ নিজ শিল্পকর্ম প্রস্তুতে ব্যস্ত, তখন সুমনের মাথায় আসে এক অভিনব ভাবনা। 

সুমনের দাবি, কলাভবনের ছাদে পা ঝুলিয়ে বসে থাকার সময় তিনি লক্ষ্য করেন, বাড়ির ছাদটি দেখতে অনেকটা পুকুরের মতো। ছাদের পাশের দেওয়াল পুকুরের চারধারের উঁচু ঘাটের মতো। সেই ভাবনা দীর্ঘদিন ধরে তার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল।

এরপর তিনি ছাদটিকে পুকুর বানাবেন বলে মনস্থির করেন। সেইমতো অধ্যাপক, শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে কাজে নামেন।

শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন জায়গা থেকে পদ্মপুকুরের ছবি মোবাইলের লেন্সবন্দি করে আনেন সুমন। পরে সঙ্গীত-কলাভবনের ছাদটাকেই তুলির টানে আস্ত একটি পুকুর বানিয়ে পদ্ম ফোটান স্নাতকোত্তরের এই শিল্পী। পুকুরে পানিও রয়েছে। উপর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, যে এটি ছবির 'পদ্মপুকুর'। 

ফামিদা সিফাত নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন 'ওয়াও!! এখানে বসার জন্য একটি নৌকা বানিয়ে রাখলে আরও দৃষ্টিনন্দন হতো!' 

রুমাইসা রুমি লিখেছেন 'যে মানুষটার ভাবনায় সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। সেই মানুষটাই প্রকৃত সুন্দর!'  প্রিয়ঞ্জনা খান এক নারীর প্রশ্ন 'বৃষ্টি হলে কি এটি উঠে যাবে?' উত্তরে সুমন জানান 'না'। 

শিল্পী সুমন দে জানায় 'কলাভবনের এই ছাদটি পুকুরের মত আকারের। তাই পরীক্ষার আগে এটিকে পদ্মপুকুর বানিয়ে ফেললাম। আমাদের এখানে হাতিপুকুর, পদ্মপুকুরসহ আশেপাশে যে পুকুরগুলি আছে তার ফটোগ্রাফস সংগ্রহ করে এই জায়গায় বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এমনকি কাজ করার সময় বৃষ্টি হয়, সে বৃষ্টিটাকেও আমি সদর্থকভাবেই গ্রহণ করি।' 

প্রায় ৮ থেকে ১০ দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সে এই পদ্ম পুকুর বানিয়েছে সুমন। যদিও সে কাজ খুব সহজ ছিল না। সে জানায় 'এই কাজকে বাস্তবে ফুটিয়ে তুলতে শেষ চারদিন আমি ঘুমোতে পারিনি। বলে জানান সুমন। কাজ করতে করতেই আমি এখান থেকে সূর্য উঠতে দেখেছি, আবার সূর্যকে ডুবতে দেখেছি।' 

প্রচণ্ড দাবদাহের কারনে কাজ করতে করতে সে যখন কর্দমাক্ত হয়ে পড়ছিলেন, তখন গায়ে পানি ঢেলে শরীর ঠাণ্ডা করে ফের কাজ শুরু করেছেন সুমন। আর তা করতে গিয়েই ঠান্ডা-গরম লেগে যায় তার। 

শিল্পী জানান, সম্পূর্ণ এই কাজে অ্যাক্রেলিক ও ওয়েদার কোট বার্জার রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ৩৫ হাজার রুপি খরচ হয়েছে কৃত্রিম পদ্মপুকুর তৈরির জন্য।' পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় শিল্পকলার কাজ করে উপার্জিত অর্থ সঞ্চয় করেই সে এই নজরকাড়া পুকুরটি বানিয়েছে বলেও জানায় সে৷ 

এই কাজে সুমনের প্রাপ্তি মানুষের ভালোবাসা ও প্রশংসা। সে জানায় 'সবাই খুব প্রশংসা করছে। কতজন এসে ছবি তুলছে। এটাই আমার প্রাপ্তি৷'

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর