১০ জুন, ২০২৩ ২১:৩৩

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর বেড়েছে সহিংসতা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর বেড়েছে সহিংসতা

সংগৃহীত ছবি

পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরই সহিংসতা ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে আগামী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা দেয় রাজ্যের নির্বাচন কমিশন। সেই মোতাবেক পরদিন শুক্রবার থেকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শুরু হয়। আর সেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি, সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। 

শুক্রবারের পর শনিবারও বিভিন্ন জেলা থেকে হিংসার ঘটনা সামনে আসে। রাজ্যটির বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়রে বিজেপিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ তুলে পাত্রসায়ের ব্লকের কাকরডাঙ্গা মোড়ে রাস্তায় বসে পথ অবরোধ করেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তৃণমূল আশ্রিত দুর্বৃত্তরা তাদের দলীয়কর্মী সমর্থকদের ভয় দেখানোর জন্য বোমাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। যদিও বিজেপি সংসদ সদস্যের তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। 

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়-২ ব্লকে 'ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট' (আইএসএফ) প্রার্থীকে কেন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ফর্ম দেওয়া হলো, এই প্রশ্ন তুলে সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এদিন দুপুরে ভাঙড়ের চালতাবেড়িয়া অঞ্চলের আইএসএফ নেতা সাইম কাদিরকে ফর্ম দেয় ভাঙড় ২ বিডিও অফিসের কর্মচারী বিদ্যুৎ ঘোষ। কেন তিনি ফর্ম দিয়েছেন এই প্রশ্ন তুলে বিদ্যুৎ ঘোষকে মারধর করে চালতাবেড়িয়া অঞ্চলের তৃণমূল নেতা রাজ্জাক মোল্লা। 

বীরভূম জেলার লাভপুরে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় এক বিজেপি নেতাকে মেরে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় দিনেও উত্তেজনা ছড়ায় পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বারাবনিতে।

তবে সবচেয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি মুর্শিদাবাদ জেলায়। মনোনয়ন পত্র জমাকে কেন্দ্র করে রীতিমত রণক্ষেত্র চেহারা নেয় ডোমকল। বিরোধী দল সিপিআইএম মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাদেরকে বাধা দেওয়া হয়। তারা যাতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারে সে কারণে বিডিও অফিস চত্ত্বর ঘিরে রাখে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। এ সময় ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদের মধ্যে প্রবল সংঘর্ষ বাধে। এক পক্ষ আরেক পক্ষের দিকে উদ্দেশ্য করে লাঠি, পাটকেল, ঢিল ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের প্রায় ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। 

এদিন ডোমকলেই অন্য আরেকটি ঘটনায় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারকে ঘিরে রীতিমত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এদিন দুপুরে ডোমকল থানার পুলিশ ডোমকল হাসপাতাল মোড় থেকে বাশির মোল্লা নামে ডোমকল-৫ নম্বর সারাংপুর অঞ্চলের অঞ্চল সভাপতিকে আটক করলে তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি অস্ত্র। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কেন তিনি অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তার উত্তর দিতে পারেনি বাশির। এর আগে এই জেলাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় এক কংগ্রেস কর্মীর। 

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যজুড়ে এই সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৩ জুন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বিরোধীদের তরফে যে সমস্ত অভিযোগ এসেছে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের সাথে কথা বলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। এদিন দুপুরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে ডেকে পাঠায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে কোনো রকম অশান্তি বা গন্ডগোল বরদাস্ত করা যাবে না তা পরিষ্কার জানিয়ে দেন রাজ্যপাল। আর এরপরেই নড়েচড়ে বসে কমিশনার। 

শেষবার ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতা দেখেছিল গোটা রাজ্যবাসী। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগে ও পরে সেসময় বহু মানুষের প্রাণ যায়। সেই সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে এবারের নির্বাচনেও। হচ্ছেও তাই। মুর্শিদাবাদ দিয়ে তার শুরু, তবে শেষ কোথায়, তা জানা নেই। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর